অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ছিলেন বিস্ময়কর প্রতিভা

জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্মরণে আজ শনিবার ‘আলোর পথযাত্রী’ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ছিলেন অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় একজন ব্যক্তি। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষের জন্য হৃদয় দিয়ে কাজ করেছেন। যেকোনো জটিল বিষয়ে বিতর্কের ঊর্ধ্বে গিয়ে সহজে সমাধান দিতে পারতেন। তিনি ছিলেন একজন বিস্ময়কর প্রতিভা।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীতে জামিলুর রেজা চৌধুরী স্মরণে প্রকাশিত ‘আলোর পথযাত্রী (বিকন অব লাইট)’ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তাঁর বন্ধু, সহকর্মী, ছাত্র ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী পুরকৌশল ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বুয়েট অ্যালামনাই।

জামিলুর রেজা চৌধুরী ছিলেন বুয়েট অ্যালামনাইয়ের সভাপতি। তাঁকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থটি লিখেছেন ১১৪ জন। সেখানে কেউ প্রশংসা করেছেন জামিলুর রেজা চৌধুরী স্মৃতিশক্তির। কেউ লিখেছেন, তিনি মুখে মুখে সমাধান করতে পারতেন জটিল গাণিতিক হিসাব। কেউ আবার তাঁকে উল্লেখ করেছেন ‘এনসাইক্লোপেডিয়া’ হিসেবে।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের শুরুতে ভিডিও বার্তায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মতো দেশের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী যুক্ত ছিলেন। দেশকে আরও উঁচুতে তুলে ধরতে তাঁর প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে।

এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী জামিলুর রেজা চৌধুরী প্রকৌশলী হলেও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ ছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রাথমিক পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বুয়েট অ্যালামনাইয়ের সভাপতি অধ্যাপক আইনুন নিশাত। তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণে জামিলুর রেজা চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের শুরুর দিকের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার সেতুটি নির্মাণ করতে চাইলে এর অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা নেই বলে বিশ্বব্যাংক আপত্তি জানিয়েছিল। জামিলুর রেজা চৌধুরী অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে পরামর্শ করে সেতুটি নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে জামিলুর রেজা চৌধুরীর জ্ঞান ছিল। যেকোনো জটিল বিষয় জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করতে পারতেন। কোনো বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও তাঁর ওপর আস্থা রেখে সবাই তাঁর কথা মেনে নিতেন। তিনি ছিলেন একজন বিস্ময়কর প্রতিভা।

জামিলুর রেজা চৌধুরীকে একজন অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, একবার বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল ধরলে তাঁরা উদ্বেগে ছিলেন। সে সময় জামিলুর রেজা চৌধুরীকে ফাটলের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ফাটল দেখে এসে জানান, এটি তেমন বড় উদ্বেগের বিষয় নয়। তাঁর কথায় সবাই আস্থা রেখেছিলেন। সবাই আস্থা রাখতে পারেন এমন মানুষের সংখ্যা এখন কমে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সমাজ ও দেশের কাছ থেকে প্রত্যেকে নেয়, কিন্তু তা শোধ করার দায়বদ্ধতা থাকে না অনেকের। জামিলুর রেজা চৌধুরী দেশ ও সমাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার ঋণ শোধ করেছিলেন।

অনুষ্ঠানে ‘আলোর পথযাত্রী’ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন জামিলুর রেজা চৌধুরীর স্ত্রী সেলিনা নওরোজ চৌধুরী। তিনি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠানকে জামিলুর রেজা চৌধুরীর প্রতি সবার অফুরন্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ছেলে কাশিফ রেজা চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশনার পটভূমি তুলে ধরেন স্মারকগ্রন্থের নির্বাহী সম্পাদক ও বুয়েট অ্যালামনাইয়ের সহসভাপতি কাজী এম আরিফ। স্মারকগ্রন্থের নির্বাচিত প্রবন্ধের অংশ থেকে পাঠ করেন আবদুল্লাহ আল আরিফ রানা ও নায়না তাবাসসুম। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন বুয়েট অ্যালামনাইয়ের তথ্য প্রকাশনা ও যোগাযোগ সম্পাদক ইমু রিয়াজুল হাসান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বুয়েট অ্যালামনাইয়ের মহাসচিব মাহ্তাব উদ্দীন।