প্রধান বিচারপতির কাছে সমিতির নির্বাচন ঘিরে পুলিশের হামলার বর্ণনা দিলেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বুধবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোলের একপর্যায়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন পুলিশ সদস্যরা
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

আইনজীবীদের অন্যতম সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এবারের (২০২৩-২৪) নির্বাচন পরিচালনাকে ঘিরে পুলিশের হামলাসহ গত দিন ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা আপিল বিভাগে তুলে ধরেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের আপিল বিভাগে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন তাঁরা। একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘আপনারা ১১টার সময় খাসকামরায় আসেন। প্রয়োজন হলে অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডেকে নেব।’

সকাল নয়টার আগে থেকেই আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতির এজলাসে (১ নম্বর বিচারকক্ষে) আসতে শুরু করেন বিএনপিপন্থী তিন আইনজীবী। সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে এজলাসে আসেন প্রধান বিচারপতি ও অপর সাত বিচারপতি।

এরপর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে নজিরবিহীন ঘটনা গতকাল ঘটেছে, যা চলমান। আজও রুমে তালা লাগানো আছে, অনেকের রুমের চারপাশে পুলিশ দেওয়া হয়েছে। বাইরে থেকে এ ঘটনার পেছনে কেউ আছে কি না, তা দেখতে হবে। এই অঙ্গনে এটা কি অনুমোদিত? তারা সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্যদেরও নির্যাতন করেছে। আমরা সুরক্ষা চাইছি, ভুক্তভোগীরা বলবেন।’

সমিতির নির্বাচনে বিএনপি প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আপনারা দেশের বিচার বিভাগের অভিভাবক। তাই প্রত্যেকের ব্যথা, কষ্ট অভিভাবক হিসেবে অবহিত করা উচিত। সমিতির নির্বাচন হয় সব সময় উৎসবমুখর। তবে এবার কী হলো? আজও আমি রুমে ঢুকতে পারিনি। রুমের বাইরে থেকে তালা লাগানো। কক্ষের সামনে পুলিশ রয়েছে। হাজার হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অনেক আইনজীবী আহত হয়েছেন। পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। গতকালের ঘটনা দেখেছেন, পুলিশ কীভাবে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দিয়েছে। আমরা কী অপরাধ করেছি? আমি প্রার্থী, আমি কেন ভোটকেন্দ্রে থাকতে পারব না?’

প্রথম আলোসহ কয়েকটি পত্রিকা আদালতে উপস্থাপন করে রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আপনারা এ অঙ্গনের অভিভাবক। আপনারা দেখেন। বিচারপতি মনসুরুল হক চৌধুরীকে প্রধান করে সর্বসম্মতিক্রমে একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হয়। ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় প্রার্থী পরিচিতি সভায় তিনি দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু হঠাৎ কী হলো? তিনি পদত্যাগ করলেন। তিনি ফোনে আমাকে জানিয়েছেন, বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন। তারা আলাদা ব্যালট পেপার তৈরি করে যেভাবে বলবে, সেভাবে কাজ করতে বলেছে। তাই উনি পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের পর এখন সর্বসম্মতিক্রমে নতুন পরিচালনা কমিটি গঠন করতে হবে। তবে তা না করেই তারা ভোট গ্রহণ শুরু করেছে।’

নির্বাচনে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে ঘায়েল করতে মামলা করা হয় উল্লেখ করে রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘এরপর রাতে মো. মনিরুজ্জামান (নির্বাচন উপকমিটির আহ্বায়ক) সাহেব বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। আমাকে ও সভাপতি প্রার্থীসহ অনেককে আসামি করা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় আরেকটি মামলা করেছে সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দিয়ে। সেখানে সমিতির বর্তমান কমিটির ছয়জন সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।’

এ সময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘মি. রুহুল কুদ্দুস, আপনাদের সবাইকে সম্মান করি। আপনারা ২ জন ১১টার সময় (বিরতি) আসেন। কোনো করণীয় থাকলে করব। প্রয়োজনে অ্যাটর্নি জেনারেলকেও ডেকে নেব।’

সমিতির সভাপতি পদপ্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘নজিরবিহীন ঘটনা। ভোটকেন্দ্রে ৩০০ থেকে ৪০০ পুলিশ ঢুকে ধাক্কা দিতে থাকে। সবাই পড়ে যাচ্ছিল আর পুলিশ পা দিয়ে পাড়িয়েছে। আমার পায়ে ব্যথা। আমি ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছি না। অনেক আইনজীবী ও সাংবাদিককে আহত করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন

এ সময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘এ কথাগুলো ভেতরে বসে শুনি। ১১টায় আসেন, আমরা আপনাদের কথা শুনব। এখন কোর্টের কাজ করি।’

একপর্যায়ে রুমের তালা খুলে দেওয়ার ও পুলিশ সরানোর আরজি জানান রুহুল কুদ্দুস। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কোর্টে বসে এটি বললে আদেশ হয়ে যাবে। ১১টায় আসেন, শুনি।’