প্রথম আলোর আহমদুল, সাজিদসহ ১৫ সাংবাদিক পেলেন মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস

অতিথিদের সঙ্গে ২০২৩ সালের মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীরা। আজ সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলেছবি: প্রথম আলো

জাতিসংঘ শিশু তহবিল—ইউনিসেফের মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আহমদুল হাসান, ফটোসাংবাদিক সাজিদ হোসেনসহ ১৫ সাংবাদিক। তাঁদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী তিন ‘শিশু সাংবাদিক’ও রয়েছে।

আজ সোমবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ অন্য অতিথিরা। ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসের ১৮তম আসর ছিল এটি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, শিশুদের প্রয়োজনগুলো সবার সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শিশু-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের অন্তর্দৃষ্টিমূলক বিশ্লেষণ সমাজ ও নীতিনির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। এতে করে শিশু অধিকারগুলো নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হয়।

মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস শুরু হয় ২০০৫ সালে। এই পুরস্কারের মাধ্যমে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এবার ৯ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ বিচারক প্যানেল ১২টি ক্যাটাগরিতে (শ্রেণিতে) মনোনীত ৬৫ জনের মধ্য থেকে পুরস্কার বিজয়ীদের নির্বাচিত করেছে। এবারের পুরস্কারের জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরের প্রিন্ট, ফটো ও ভিডিও বিভাগের সাংবাদিকদের কাছ থেকে প্রায় এক হাজার আবেদন পেয়েছিল ইউনিসেফ।

মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসের নামকরণ করা হয়েছে ‘মীনা’ কার্টুন চরিত্রকে কেন্দ্র করে। ইউনিসেফের নির্মিত এই কার্টুন চরিত্রটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ‘মীনা’ কার্টুনে শিশুদের অধিকার নিয়ে কথা বলা হয় এবং শিশুদের প্রতি বড়দের দায়িত্ব কী, তা তুলে ধরা হয়। ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় কার্টুনটি সম্প্রচারিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, প্রতিবেদন, ফটো ও ভিডিও–সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কাজগুলো শিশুদের জীবনে কী প্রয়োজন, শুধু সেটাই তুলে ধরেনি; বরং শিশুদের জীবন আরও সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য কী কী করণীয়, সেদিকেও আলোকপাত করেছে। শিশু অধিকার নিশ্চিতে তিনি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কাজ করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষাবিদ ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল পুরস্কার বিজয়ী এবং অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমি জীবনে কোনো দিন কোনো পুরস্কার পাইনি। তাই বলে কিন্তু আমার জীবন বৃথা যায়নি। এখন আমি অন্যদের হাতে পুরস্কার তুলে দিই। এটা অনেক বেশি আনন্দের।’

অনুষ্ঠানে দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, দেশের শিশুদের অনেকেই এখনো নানা বঞ্চনার মধ্যে রয়েছে। এই শিশুদের নিয়ে আরও অনেক কাজ করতে হবে। ইউনিসেফের এই পুরস্কার সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সাংবাদিকদের মধ্যেও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করার স্পৃহা বাড়াবে।

এবারের বিচারক প্যানেলের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, পুরস্কারের জন্য জমা দেওয়া প্রতিবেদনগুলোতে বৈচিত্র্য ছিল। রোহিঙ্গা শিশুসহ শিশুদের নানা বঞ্চনার চিত্র উঠে এসেছে প্রতিবেদনগুলোতে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম; পোর্ট্রেট আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন; ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ; চলচ্চিত্র নির্মাতা ও পাঠশালা ইনস্টিটিউটের প্রভাষক শামীম আখতার; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কাজলী শেহরীন ইসলাম; রয়টার্স ইন বাংলাদেশের সাবেক ব্যুরো চিফ সিরাজুল ইসলাম কাদির; এএফপির ব্যুরোপ্রধান শফিকুল আলম; ইউনিসেফের ন্যাশনাল অ্যাম্বাসেডর অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম প্রমুখ পুরস্কারজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২৩-এর অন্য বিজয়ীরা হলেন বাংলা ট্রিবিউনের উদিসা ইসলাম; যমুনা টেলিভিশনের মো. বনি আমিন; ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের মো. সবুজ মাহমুদ; ঢাকা পোস্টের মো. রাকিবুল হাসান, মো. জসীম উদ্দীন, মুছা মল্লিক ও নজরুল ইসলাম; ঢাকা নোটের রবিউল আলম; দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের সাধন কুমার সরকার; সিভয়েস টোয়েন্টিফোর ডটকমের শারমিন রিমা।

পুরস্কার পাওয়া ১৮ বছরের কম বয়সী সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছে দৈনিক আজকের সুন্দরবনের মো. সাফায়েত হোসেন, এটিএন বাংলার মো. মুজাহিদ ইসলাম ও ইকোনমিক নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মো. নাঈম ইসলাম।