ব্রিকসে যোগদানে ভূরাজনৈতিক বিষয়ই মুখ্য

পাঁচ দেশের অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে যোগ দেওয়ার কারণ যতটা না অর্থনৈতিক, তার চেয়ে বেশি ভূরাজনৈতিক। আর জোটের দুই সদস্য চীন ও ভারতের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কারণে বাংলাদেশের জন্য ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সঠিক সময় এখনই।

নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) আয়োজনে রোববার এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এ মন্তব্য করেন। ২২ থেকে ২৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠেয় ব্রিকসের পঞ্চদশ শীর্ষ সম্মেলন সামনে রেখে ‘ব্রিকসে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার: চ্যালেঞ্জ ও সুফল’ শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

প্যানেল আলোচক ও সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বলেন, সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধে৵ আলোচনা কিংবা দর–কষাকষির মাধ্যমে ব্রিকসের জন্ম হয়নি; বরং একটি প্রতিষ্ঠানের বোর্ডরুমে ব্রিকসের জন্ম। ফলে অর্থনীতি ও বিনিয়োগের ফোরাম হিসেবে এটি অগ্রসর হয়নি। এখন ব্রিকসের সম্প্রসারণের যে ভাবনা, সেটি মূলত জোটকে ভূরাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারেরই অংশ।

ব্রিকসে বাংলাদেশের যোগদানের প্রসঙ্গ টেনে এসআইপিজির অধ্যাপক শহীদুল হক বলেন, পাঁচ দেশের এই জোটে যোগদানের বিষয়ে বাংলাদেশের সামনে তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। ২০২৬ সালের পরে বাংলাদেশ কীভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করে, সেটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা এবং তৃতীয়টি হলো বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের নীতি হচ্ছে ভারসাম্য রক্ষা করা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সব সময় সমান ভারসাম্য থাকে। কিছু সময়ে আমরা একদিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়ি এবং যখন সময় আসে তখন আবার ভারসাম্যের অবস্থায় ফিরে আসি। বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, ঝুঁকে পড়ার পরে আবার ভারসাম্য বজায় রাখার অবস্থায় ফিরে আসাটা।’

ব্রিকসের সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা থাকলেও ভারত ও ব্রাজিল মনে করে নতুন সদস্য যুক্ত করার আগে অন্তর্ভুক্তির মানদণ্ড চূড়ান্ত করা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রতিটি দেশের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ থাকে। বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়ে ভারত সহযোগিতা করবে কি না, এটি তাদের জাতীয় স্বার্থ ও নিজেদের নানা হিসাব–নিকাশের ওপর নির্ভর করবে।’

নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, ভূরাজনীতির বিষয়টিকে বিবেচনায় নিলে ব্রিকসে যোগদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এখনই ভালো সময়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও চীনের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই বাংলাদেশের ব্রিকসে যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়াটা সহজ হবে।