নোয়াখালী পৌরসভায় সৌর সড়কবাতির কোনোটি জ্বলে মাঝরাত পর্যন্ত, আবার কোনোটিতে নেই বাতি

নোয়াখালী পৌরসভা ভবনের ফটকের পাশে লাগানো সৌরবাতির খুঁটিতে সোলার প্যানেল থাকলেও বাতি নেই। গতকাল দুপুরে তোলাছবি: প্রথম আলো।

কোনোটি সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত জ্বলে। আবার কোনোটি সূর্যাস্তের পর জ্বলে ওঠে ঠিকই, কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে নিবু নিবু হয়ে আসে। রাত ১২টা-১টার পর আর জ্বলেই না। এই চিত্র জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় সৌর বিদ্যুতায়িত সড়কবাতি স্থাপন প্রকল্পের। এর মধ্যে খোদ নোয়াখালী পৌরসভা প্রধান ফটকের সামনে স্থাপন করা সড়কবাতিরই খুঁটিতে সোলার লাগানো দেখা গেলেও বাতির দেখা মেলেনি।

পৌরসভার বিদ্যুৎ বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রায় তিন বছর আগে ‘শেখ হাসিনার নির্দেশ, জলবায়ু সহিষ্ণু বাংলাদেশ’ স্লোগানে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে নোয়াখালী পৌরসভা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের আওতায় পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়কে এবং জনবসতিপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ২৩৮টি সৌর বিদ্যুতায়িত সড়কবাতি লাগানো হয়।

প্রতিটি বাতির জন্য খরচ ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী, প্রতিটি সোলার প্যানেলের ওয়ারেন্টি ৩০ বছর, আর বাতির ওয়ারেন্টি ৩ বছর। প্রকল্পটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে মোবিটিস বাংলাদেশ লিমিটেড ও মেসার্স অলি আহাদ ভূঁইয়া।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২৩৮টি বাতির ৩০টি এখন জ্বলেই না। বাকিগুলো আলো দিয়ে যাচ্ছে। তবে এসব বাতি নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই নাগরিকদের।  

গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে সরেজমিনে শহরের হাসপাতাল সড়ক, পৌরসভা ভবনের প্রধান ফটক, জেলখানা সড়ক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার প্রধান ফটকের সামনে সৌর বিদ্যুতায়িত সড়কবাতির খুঁটির সঙ্গে সোলার প্যানেল থাকলেও বাতি নেই। তবে পৌর ভবনসংলগ্ন হাসপাতাল সড়কের পাশে আরও তিনটি সড়কবাতি দেখা যায়। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাতিগুলো ঠিকমতো জ্বলে। মাঝেমধ্যে সমস্যা হলেও পৌরসভার লোকজন মেরামত করে দিয়ে যান।

শহরের জেলখানা সড়ক-সংলগ্ন নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে লাগানো হয়েছে দুটি সৌর বিদ্যুতায়িত সড়কবাতি। দুটি বাতিই বিকেলে সূর্যাস্তের পর জ্বললেও রাত ১২টা থেকে ১টার দিকে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১৫-২০ দিন ধরে এমন সমস্যা। বাড়ির বাসিন্দা গৃহিণী জরিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তাঁর ঘরের সামনের সৌরবিদ্যুতের বাতিটি ঠিকমতো জ্বলে না। প্রথম দিকে রাত দুই-তিনটার দিকে বন্ধ হয়ে যেত। এখন ১২টার দিকে বন্ধ হয়ে যায়। তিনি পৌরসভার বিদ্যুৎ শাখায় জানিয়েছেন। তারা এখনো আসেনি।

ঠিকমতো বাতি না জ্বালার একই অভিযোগ করেছেন একই বাড়ির আরেক গৃহিণী মারজাহান বেগম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁদের ঘরের সামনে লাগানো সৌরবিদ্যুতের বাতি প্রতিদিন রাত একটার দিকে বন্ধ হয়ে যায়। অথচ বাড়ির দুটি বাতিই লাগানো হয়েছে একেবারে খোলা আকাশের নিচে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্যের আলোর মধ্যে থাকে সোলার প্যানেল। এরপরও তাঁরা ঠিকমতো রাতে বিদ্যুতের আলো পাচ্ছেন না।

পৌরসভার বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী সোহেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জলবায়ু ট্রাস্টের অর্থায়নে পৌরসভায় ২৩৮টি সৌর বিদ্যুতায়িত সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০টি বাতি নানা ত্রুটির কারণে বর্তমানে জ্বলছে না। বাকি বাতিগুলোর সবই ঠিকমতো আলো দিচ্ছে। যেসব বাতি জ্বলছে না, সেগুলো মেরামতের জন্য রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংস্থাকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। শিগগিরই সব বাতি সচল হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী সোহেল আহমেদ বলেন, প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী প্রতিটি বাতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বুঝে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বাতি স্থাপনে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।