চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেন চলেনি, শিক্ষার্থীদের বাসে যেতে নির্দেশ

চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা। আজ সকাল আটটায়
ছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের বাহন শাটল ট্রেন চলাচল এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে আজ রোববার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

ট্রেনের লোকোমাস্টাররা ধর্মঘট ডেকেছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ট্রেন চলাচল না করলেও শিক্ষার্থীদের বাসে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার। আজ সকাল আটটায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ট্রেন চলাচলের বিষয়ে কাজ করছি। শিক্ষার্থীদের জন্য আটটি বাস বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সকাল নয়টায় পাঁচটি ষোলশহর থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। আর তিনটি একই সময়ে বটতলী থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে যাবে। ক্লাস-পরীক্ষা যথাসময়ে হবে।’

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শাটল ট্রেনের ছাদে চড়ে যাওয়ার সময় হেলে পড়া গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৬ শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাত ১২টার দিকে ৬৫টি যানবাহন, উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক ক্লাব ও পুলিশ বক্স ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে ট্রেনে থাকা লোকোমাস্টার জাহেদুল ইসলাম, সহকারী লোকোমাস্টার মইনুল ইসলাম পাটোয়ারী ও গার্ড জহিরুল ইসলামকেও মারধর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ট্রেন স্টেশনে রেখেই এই তিনজন পালিয়ে যান। এর পর থেকে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শাটল ট্রেন না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন লোকোমাস্টাররা।

আরও পড়ুন

গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবারও ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। তবে ওই দুই দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এর কোনো প্রভাব একাডেমিক কার্যক্রমে পড়েনি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমান পৌনে আটটায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ট্রেন চলাচলের চেষ্টা করছি। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান হবে।’

শাটল ট্রেন নগরের বটতলী থেকে ক্যাম্পাস অভিমুখে দিনে সাতবার যাওয়া–আসা করে। এতে দিনে ১০ হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা কিংবা ক্লাস হবে কি না, এটিও নির্ভর করে ট্রেন চলাচলের ওপর। ট্রেন চলাচল না করলে ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত থাকে, এমনটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত রীতি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চৌধুরী আমীর মোহাম্মদ মুছা সকালে প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তবে শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত না হতে পারলে পরীক্ষা হবে না।

শিক্ষার্থীদের বাসে যেতে নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ সকাল নয়টায় নগরের ষোলশহর
ছবি: জুয়েল শীল
আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের চালককে মারধর, অপহরণ ও লাঞ্ছিতের ঘটনা বৃহস্পতিবারই প্রথম নয়। করোনা মহামারির শেষে বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার পর থেকে গত দুই বছরে অন্তত ১০ বার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে ও বিচার দাবিতে লোকোমাস্টাররা ধর্মঘট শুরু করেছেন।

ট্রেন চলাচলের বিষয়ে লোকোমাস্টারদের সঙ্গে আজ সকাল সাতটায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির নগরের বটতলী স্টেশনে বৈঠকে বসার কথা ছিল। তবে সকাল আটটা পর্যন্ত লোকোমাস্টারদের কোনো প্রতিনিধি সেখানে আসেননি।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম শাহরিয়ার আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত দুইটার সময় সকাল সাতটায় বৈঠকের কথা জানানো হয়েছিল। এত কম সময়ে সবাইকে নিয়ে বৈঠকে আসা সম্ভব ছিল না। তাই তাঁরা নয়টার দিকে বৈঠকে বসবেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে তাঁরা বৈঠক শেষে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।