যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করতে দরকার জনসচেতনতা

যক্ষ্মা সচেতনতাবিষয়ক প্রচারণা কর্মশালায় গতকাল বক্তব্য দেন চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম। সকালে বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

‘যক্ষ্মা নয় ভয়, বিনা মূল্যে চিকিৎসায় যক্ষ্মা ভালো হয়’, ‘ঐক্য গড়ি সবাই মিলে, কাজ করি যক্ষ্মা নির্মূলে’, ‘যক্ষ্মা আর ভয়ের নয়, সচেতনতায় হবে জয়’, ‘আর নয় সংশয়, যক্ষ্মা নির্মূলে বিশ্বজয়’, ‘যক্ষ্মা হলে সংকোচ নয়, বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা পাই’ প্রভৃতি স্লোগান নিয়ে রাজশাহীতে যক্ষ্মা সচেতনতাবিষয়ক প্রচারণা কর্মশালা শেষ হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির সম্মেলনকক্ষে দিনব্যাপী এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

একই দিনে বগুড়ায় দিনব্যাপী যক্ষ্মা সচেতনতাবিষয়ক প্রচারণা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

যক্ষ্মা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ইউএসএআইডির পৃষ্ঠপোষকতায় আইসিডিডিআরবির পরিচালনায় এ কর্মসূচির আয়োজন করে প্রথম আলো বন্ধুসভা। এই কর্মসূচির আওতায় রাজশাহী বিভাগের আটটি এবং রংপুর বিভাগের চারটি জেলায় প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জেলাগুলো হচ্ছে রাজশাহী, জয়পুরহাট, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম। এর আগে গত জুনে ঢাকায় তিন দিনব্যাপী কর্মশালার মধ্য দিয়ে সচেতনতা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক পর্ব শুরু হয়।

রাজশাহীর কর্মশালায় বক্তারা বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশে অসংখ্য মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। অথচ অধিকাংশ মানুষের ধারণা, যক্ষ্মা কমে গেছে। বেশসংখ্যক যক্ষ্মা রোগীকে শনাক্ত করা যায় না। কারণ, তাঁরা সচেতন নন, আজীবন যক্ষ্মার জীবাণু বহন করেই মারা যান। এই রোগ শনাক্তে, রোগ থেকে বাঁচার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে জনসচেতনতায়। আজকের কর্মশালায় অংশ নেওয়ার এই তরুণেরাই এই কাজটি এগিয়ে নেবেন।

কর্মশালায় রাজশাহী বন্ধুসভার ২৫ সদস্য অংশ নেন। এতে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা সার্ভিল্যান্স চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুর রব সিদ্দিকী, আইসিডিডিআরবির সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক আজাদ রহমান, আইসিডিডিআরবির চিকিৎসা কর্মকর্তা আহসান তাকিব, প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা রাজশাহীর সভাপতি সাব্বির খান। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার প্রচার সম্পাদক তাহমিনা আক্তার।

কর্মশালায় পরিচিতি পর্বের পর শুরু হয় আলোচনা। এর আগে গঠন করা হয় পাঁচজন করে পাঁচটি দল। শুরুতে আলোচনা করেন আজাদ রহমান। তিনি বিশ্ব ও বাংলাদেশের যক্ষ্মা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, প্রতিবছর বাংলাদেশে নতুনভাবে আনুমানিক ৩ লাখ ৭৫ হাজার ব্যক্তি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। প্রতিবছর যক্ষ্মার কারণে ৪২ হাজার মানুষ মারা যান। অনেকেই জানেনই না যে তাঁদের যক্ষ্মা হয়েছে। সচেতনতাই পারে এই রোগকে কমাতে।

যক্ষ্মা রোগ কী, কীভাবে ছড়ায়, প্রতিকার ও প্রতিরোধ কী, সে বিষয়ে আলোচনা করেন আহসান তাকিব। তিনি বলেন, কর্মশালায় অংশ নেওয়া তরুণেরাই আগামীতে যক্ষ্মা সচেতনতায় কাজ করবেন। তাঁদের কাজের মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগ কমে আসবে।

কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করা হয়।

ওষুধ খেলে যক্ষ্মা ভালো হয়

বগুড়ায় দিনব্যাপী এই কর্মশালা সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়। এতে বন্ধুসভার ২৮ সদস্য অংশ নেন। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ শফিউল আজম, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির রাজশাহী বিভাগীয় টিবি এক্সপার্ট সাইফুল ইসলাম, ডেপুটি সিভিল সার্জন শাহনাজ পারভীন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সামির হোসেন, আইসিডিডিআরবির সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফেরদৌস হোসাইন, বগুড়া বন্ধুসভার উপদেষ্টা অনিন্দিতা হক, বগুড়ায় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার পারভেজ, কৃষি উদ্যোক্তা আহসানুল কবির, বগুড়া বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদকচন্দন কুমার রায় প্রমুখ।

উদ্বোধন পর্ব শেষে আইসিডিডিআরবির সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফেরদৌস হোসাইন যক্ষ্মা সম্পর্কে ভিডিও প্রদর্শন করেন। পাশাপাশি যক্ষ্মা কী, কেন হয়, লক্ষণ কী, রোগের ভয়াবহতা ও বিস্তার, যক্ষ্মা প্রতিরোধে করণীয় ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বিষয়ে আলোচনা করেন। পরে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চারটি গ্রুপ ভাগ করে কর্মশালায় অর্জিত জ্ঞানের ওপর গ্রুপভিত্তিক আলোচনা করা হয়।

বগুড়ার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ শফিউল আজম বলেন, ‘আমরা করোনা ভাইরাসকে যতটা গুরুত্ব দিই, যক্ষ্মা নিয়ে ততটা সচেতন নই। ফলে দেশে যক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সময়মতো সঠিক চিকিৎসার বিকল্প নেই।’

বগুড়া বন্ধুসভার সভাপতি এবং সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সামির হোসেন বলেন, ‘সাধারণত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি হলে একজন মানুষের যক্ষ্মা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কর্মশালায় অংশ নিয়ে যক্ষ্মার ভয়াবহতা সম্পর্কে যা জেনেছি, অবশ্যই অন্যকে সেসব বিষয়ে জানানোর চেষ্টা করব।’