শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা: দিবস ঘনিয়ে এলেই বৈঠক

স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হতে চললেও মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করতে পারেনি সরকার। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় দুই পর্বে ৩৩৪ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম প্রকাশ করেছে। তৃতীয় পর্বের কাজ চলছে ঢিমেতালে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ঘনিয়ে এলেই তালিকা প্রণয়ন নিয়ে বৈঠক করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এবারও প্রায়
১১ মাস পর গত সোম ও বুধবার বিষয়টি নিয়ে দুটি বৈঠক হয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত তালিকা চূড়ান্ত হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গত বছর ১৪ ডিসেম্বর বলেছিলেন, ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের আগেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে।

আমি গবেষণাপত্রটি জমা দিয়েছি এক বছর আগে। এত দিন সেটা নিয়ে কোনো বৈঠক হয়নি। এখন এসে তাড়াহুড়া করা হচ্ছে।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন

এখনো কেন পূর্ণাঙ্গ তালিকা হলো না, জানতে চাইলে মন্ত্রী গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই আমাদের একটু সময় লাগছে। একটি কমিটি কাজ করছে। আশা করি, শিগগিরই আরেক পর্বের তালিকা আমরা প্রকাশ করতে পারব।’

২০২১ সালের ২৫ মার্চ প্রথম পর্বে ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম প্রকাশ করা হয়। গত বছরের ২০ জুন ১৪৩ জনের দ্বিতীয় পর্বের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এখন তৃতীয় পর্বের কাজ চলছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়নে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয় ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর। ১১ সদস্যের কমিটির সভাপতি মন্ত্রণালয়ের সচিব। কমিটিতে আটজন গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্য হিসেবে আছেন। গবেষকেরা বলছেন, কমিটির সভা ডাকার দায়িত্ব সভাপতির। তিনি সভা না ডাকলে কিছু করার থাকে না। প্রতি মাসে একটি সভা হওয়ার কথা। তবে তা হয় না। এখন তাড়াহুড়া করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত সোম ও বুধবার বৈঠকের পর কমিটির পরবর্তী বৈঠক ডাকা হয়েছে ২৬ ডিসেম্বর।

আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও পূর্ণাঙ্গ একটি তালিকা না হওয়া দুঃখজনক। কাজটি হলো মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের। কিন্তু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমলাদের। তাঁরা বদলি হয়ে যান, ফলে কাজ আর এগোয় না।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল বাকের মো. তৌহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ৪০০ জনের তালিকাসংবলিত একটি গবেষণাপত্র দিয়েছেন। সেখান থেকে ১৮৮ জন এবং ব্যক্তিগতভাবে করা আবেদনে আসা ৬৭ জনের নামের তালিকা যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে।

নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে যেসব বাঙালি সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিক, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক ও সংগীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং এর ফলে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা ওই সময়ে চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁরা শহীদ বুদ্ধিজীবী। শহীদ বুদ্ধিজীবীর পরিবারের সদস্যরা কোনো ভাতা পান না।

শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা করতে গঠিত কমিটি গবেষণাগ্রন্থ, পত্রিকার কাটিং, টেলিভিশনের প্রতিবেদন ও অন্যান্য সূত্রে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে তালিকাটি করবে।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গবেষণাপত্রটি জমা দিয়েছি এক বছর আগে। এত দিন সেটা নিয়ে কোনো বৈঠক হয়নি। এখন এসে তাড়াহুড়া করা হচ্ছে।’

কমিটিতে গবেষক সদস্য হিসেবে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনসহ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের, নিপসমের পরিচালক বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ এবং গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের গবেষক গাজী সালাউদ্দিন রয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ জহির (বীর প্রতীক)।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা নিয়ে একটি উপকমিটি কাজ করছে জানিয়ে শাহরিয়ার কবির গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও পূর্ণাঙ্গ একটি তালিকা না হওয়া দুঃখজনক। কাজটি হলো মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের। কিন্তু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমলাদের। তাঁরা বদলি হয়ে যান, ফলে কাজ আর এগোয় না।