সত্য-ন্যায়ের পথে অকুতোভয় ছিলেন স্থপতি মোবাশ্বের ও কূটনীতিক মহিউদ্দিন

সেক্টর কমান্ডরস ফোরাম আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ স্মরণ সভায় অতিথিবৃন্দ। প্রেসক্লাব থেকে তোলা
ছবি: সাজিদ হোসেন

মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনায় সত্য প্রকাশে আজীবন অকুতোভয় ছিলেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ। তাঁদের মতো নির্ভীক, সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ আজকাল নেই বললেই চলে। তাঁরা এখন শারীরিকভাবে না থাকলেও তাঁদের দেওয়া শিক্ষা ধারণ করে নতুন প্রজন্মকে মানুষের অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে হবে।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদের স্মরণে আয়োজিত সভায় এভাবেই দুই গুণীকে মূল্যায়ন করেন বিশিষ্টজনেরা। আজ শনিবার রাজধানীর প্রেসক্লাবে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ৭১–এর আয়োজনে এ স্মরণসভা হয়।

আলোচকেরা বলেন, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন কখনো নিজের প্রচার করেননি। দেশের জন্য যা প্রয়োজন, তাতে কখনো কুণ্ঠা করেননি, ভয় পাননি, পিছিয়ে থাকেননি। কাউকে সমীহ করে কথা বলেননি। বুকের ভেতরে যা বিশ্বাস করেছেন, সরাসরি তা–ই বলেছেন। তার সবকিছুর পেছনে ছিল দেশ, মানুষ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা। দেশে-বিদেশে যেখানেই মানুষের অধিকার পদদলিত হতে দেখতেন, সেখানেই তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন। তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ক্রীড়া সংগঠক ও নাগরিক আন্দোলনের সরব ব্যক্তি। তিনি যেভাবে সত্য কথা বলতেন, সাধারণ মানুষের হয়ে কথা বলতেন, সেভাবে সত্যের ও সাধারণ মানুষের কথা বলা সবার দায়িত্ব।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সচিব, সাবেক কূটনীতিক ও কলামিস্ট মহিউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে স্মরণসভায় উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, তিনি ছিলেন একজন অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে লন্ডনে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এক সমাবেশে সরকারি চাকরির মায়া ত্যাগ করে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে স্বাধীনতাকামী বাঙালির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বিদেশে বসেই দেশের পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি সত্য বলতে কখনো দ্বিধাবোধ করতেন না। এর জন্য তাঁকে অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে। মহিউদ্দিন খুব জ্ঞানী ও প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন।  

সহধর্মিণী বিলকিস মহিউদ্দিন বলেন, ‘ওনার মন ছিল অনেক উদার। মানুষকে ভালোবাসতেন এবং সাধারণ জীবনযাপন করতেন। যেকোনো অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য তাঁর চিন্তা হতো।’ তিনি আরও বলেন, তাঁর লেখা প্রায় দুই হাজার কলাম রয়েছে। অন্তত দামি এই লেখা আর কখনো কেউ লিখবেন না। তাই এগুলো সংগ্রহ ও সংকলন করে প্রকাশের দায়িত্ব নিতে তিনি নতুন প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ জানান।

প্রধান আলোচকের বক্তৃতায় স্থপতি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব বলেন, ‘সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজাকার বসে আছে। তারা অন্তর্ভুক্তির উন্নয়নে বিশ্বাস করে না, পুঁজিতে ও পুঁজিবাদে বিশ্বাস করে। সব জায়গায় বড় বড় প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশ পালিয়ে যায়। তবে সত্য বলতে না পারার অজুহাতে মুখ বন্ধ করে থাকতে আমি রাজি নই। রাষ্ট্রক্ষমতায় যে–ই থাকুক, অন্তর্ভুক্তির উন্নয়ন না হলে সেখানেই চিৎকার করে বলতে হবে, তুই রাজাকার।’

স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে ফোরামের কার্যকরী সভাপতি নুরুল আলমের সভাপতিত্বে মহিউদ্দিন আহমেদের ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম, ছোট ভাই জিয়াউদ্দিন আহমেদ, লেখক মোহাম্মদ আলী শিকদার, ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব ও সহসভাপতি ম হামিদ আলোচনা করেন। আলোচকেরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করে দেশ ও মানুষের কাজে উদ্যোগী হতে নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।