দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমানের আয় ১০ বছরে বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি। কিন্তু এই সময়ে তাঁর সম্পদের পরিমাণ কমে গেছে। অন্যদিকে আগে এনামুরের স্ত্রীর নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ থাকলেও এখন কিছুর উল্লেখ নেই।
নির্বাচন কমিশনে এনামুর রহমানের জমা দেওয়া দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ (সাভার) আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়েছিলেন এনামুর রহমান। এর ঠিক আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, সে সময় তাঁর আয়ের উৎস ছিল পেশা (শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শক ইত্যাদি)। এ থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
পরে ২০১৮ সালে এনামুরের আয়ের উৎস বেড়ে দাঁড়ায় তিনটিতে—ব্যবসা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও এফডিআর এবং সংসদ সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে প্রাপ্ত ভাতা। হলফনামা অনুযায়ী, সে সময় বছরে তাঁর আয় ছিল ৩০ লাখ টাকার বেশি। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এনামুর।
সম্প্রতি জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের বার্ষিক আয়ের উৎস কমে হয়েছে দুটি—শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত (এফডিআর ও ব্যাংক থেকে সুদ) এবং চাকরি (প্রতিমন্ত্রীর সম্মানী ভাতা)। খাত কমলেও এখন তাঁর আয় আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকা; অর্থাৎ এক দশকের ব্যবধানে তাঁর আয় বছরে পাঁচ গুণের বেশি বেড়েছে।
এক দশকে আয় বাড়লেও এনামুর রহমানের মোট সম্পদ কমেছে। হলফনামার তথ্য বলছে, ২০১৩ সালে তাঁর ৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ছিল। ২০১৪ সালে অস্থাবর সম্পদ (স্থাবর সম্পদ নেই) ছিল প্রায় ৭ কোটি ২০ লাখ টাকার। আর ২০২৩ সালে প্রায় ৮ কোটি ২৯ লাখ টাকার অস্থাবর-স্থাবর সম্পদ রয়েছে।
হলফনামা অনুযায়ী, সংসদ সদস্য হওয়ার আগে (২০১৩ সালে) প্রতিমন্ত্রী এনামুরের যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল, এখন তার চেয়ে প্রায় ৯৭ লাখ টাকার সম্পদ কম রয়েছে। তাঁর নগদ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থ কমেছে। তবে নতুন করে তাঁর বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ হয়েছে এবং তিনি গাড়ির মালিক হয়েছেন।
দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় এনামুর রহমানের স্ত্রীর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। তবে এবার হলফনামায় স্ত্রীর সম্পদের জায়গায় ‘প্রযোজ্য নহে’ লিখেছেন তিনি।
হলফনামার তথ্য বলছে, ২০১৩ সালে এনামুরের স্ত্রীর নামে ৮০ ভরি সোনা ছাড়াও ১৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ ছিল। আর ২০১৮ সালে স্ত্রীর নামে ৫৭৭ দশমিক ৯ শতক অকৃষি জমি ও ৮০ ভরি সোনা ছাড়াও ১৮ কোটি ৮ লাখ টাকার বেশি নগদ অর্থ ছিল। সেই সঙ্গে ছিল ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, গাড়ি, আসবাবসহ বিভিন্ন ধরনের অস্থাবর সম্পদ। তবে ২০২৩ সালের হলফনামায় স্ত্রীর সম্পদের স্থানে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
বেড়েছে দায়ের বোঝা
প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের আয় বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে দায়ের পরিমাণও। নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, সংসদ সদস্য হওয়ার আগে ২০১৩ সালে হলফনামায় তাঁর ঋণ দেখানো হয়েছিল ২৯ কোটি ৬৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ওই ঋণ ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে নেওয়া।
২০১৮ সালের হলফনামায় ইউসিবিএলে এনামুরের দায় ছিল ৫৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার বেশি। বর্তমান হলফনামা অনুযায়ী, ব্যাংকটিতে তাঁর দায় বেড়ে ৮৭ কোটি ৭২ লাখ টাকার বেশি হয়েছে।