উচ্ছ্বাসে শুরু গণিত উৎসবের চট্টগ্রাম পর্ব

চট্টগ্রামে আজ শুরু হয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসব। আজ সকাল সাড়ে আটটায় চট্টগ্রাম নগরের সেন্ট প্ল্যাসিড স্কুল অ্যান্ড কলেজেছবি: জুয়েল শীল

আনন্দ-উচ্ছ্বাসে শুরু হয়েছে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের চট্টগ্রাম পর্ব। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরের কোতোয়ালি এলাকায় অবস্থিত সেন্ট প্লাসিড স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে গণিত উৎসবের উদ্বোধন হয়।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের শুরু হয়।

জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ব্রাদার সনেট ফ্রান্সিস রোজারিও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সহযোগী ডিন অধ্যাপক ফারজানা আলম ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্ধুসভার সহসভাপতি রুমিলা বড়ুয়া।

‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় গণিত উৎসবের এ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনে সহযোগিতা করছে প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্ধুসভা।

শীতের সকালে শিক্ষার্থীদের পদচারণ

গণিত উৎসবে অংশ নিতে কনকনে শীতের মধ্যেও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হাজির হয় নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৯৮৩ শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে আসেন অভিভাবকেরাও। সকাল সাতটার মধ্যেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের পদচারণে।

সকাল আটটায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কথা হয় বিএফ শাহীন কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিহাবুল হকের সঙ্গে। তার বাড়ি নগরের পতেঙ্গায়। সকাল সাড়ে সাতটায় উৎসবে অংশ নিতে সে ঘর থেকে বের হয়। সাড়ে আটটায় পৌঁছায় উৎসব প্রাঙ্গণে। শিহাবুল জানায়, প্রথমবারের মতো উৎসবে অংশ নিচ্ছে সে। গণিতের খুঁটিনাটি জানতে এসেছে।

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অতিথিরা
ছবি: জুয়েল শীল

তৃতীয়বারের মতো উৎসবে অংশ নিচ্ছে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজিবুল ইসলাম ও তৌফিক উদ্দিন। সকাল সাতটায় উৎসব উপলক্ষে চলে এসেছে তারা। তাদের দুজনের কাছে প্রশ্ন ছিল, গণিত উৎসবে অংশ নেওয়ার কারণ কী? জবাবে তারা জানায়, গণিত তাদের দুজনেরই প্রিয় বিষয়। কেউ কেউ গণিতে ভয় পেলেও তারা সূত্র মেলাতে পারদর্শী। তাই গণিত সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে উৎসবে এসেছে। এ ছাড়া শিক্ষকদের কাছে জানার জন্য গণিত সম্পর্কে একগুচ্ছ প্রশ্ন তৈরি করে এনেছে।

ভাটিয়ারি ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে পাওয়া গেল উৎসব প্রাঙ্গণে। আবদুল্লাহ বলল, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে পদক আনতে চায় সে। এ জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে।
উৎসবে বাংলার মাঠ, আদর্শ, তৌফিক প্রকাশন, রকমারি, প্রথমা, স্বপ্ন ৭১ প্রকাশন, দ্বিমিক প্রকাশনী, তাম্রলিপির স্টলও বসেছে। সেসব স্টল ঘুরে দেখেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। লাল রঙের সোয়েটার গায়ে জড়িয়ে সকাল সাতটায় ঘর থেকে বের হয় সাইফুল ইসলাম। সঙ্গে ছিল তার বাবা আতিকুর রহমান। অষ্টম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী জানায়, একটি স্টল থেকে সে গণিতের দুটি বই কিনেছে। আরও কিনেছে ধাঁধার বই।

‘গণিতের ভয় দূর করতে হবে’

উৎসবের উদ্বোধন করে সেন্ট প্লাসিড স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ ব্রাদার সনেট ফ্রান্সিস রোজারিও সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, গণিত উৎসবের মতো এমন উৎসবে অংশ নেওয়া সবার জন্য আনন্দের। অনেকেই গণিতে ভয় পায়। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে এ ভয় দূর করতে হবে।

অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘প্রথম আলো-ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক অনেক দিন ধরে বাংলাদেশে গণিত উৎসব আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা করে আসছে। উৎসবে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ফলে প্রথম আলো ও ডাচ্–বাংলা ব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই।’

অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড থেকে বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের বাসিন্দা। ২০১৮ সালে ওই পদক এসেছিল। আমরা আশা করব, চট্টগ্রাম আবার জ্বলে উঠবে। আমরা আবার স্বর্ণপদক পাব।’

গণিত উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের একাংশ
ছবি: জুয়েল শীল

কবি ও কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে তোমরা নিজেদের গড়ে তুলবে, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। তোমাদের আগে অনেকেই গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক পদক পেয়েছে। তোমরাও একদিন বড় জায়গায় পৌঁছাবে। এ জন্য পরিশ্রমের বিকল্প নেই।’

পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম এ পি জে আবদুল কালাম বলেছিলেন, “স্বপ্ন তা–ই, যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।” তাই স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সে স্বপ্ন পূরণে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

সুফি মিজানুর রহমান বলেন, ‘তুমি যদি বড় হতে চাও, তবে হৃদয়ের গভীরে বড় স্বপ্ন থাকতে হবে। জ্ঞান অন্বেষণ করতে হবে।’

উদ্বোধনের পর আজ সকাল ১০টা ২০ মিনিট থেকে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে গণিতের পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার পর বন্ধুসভার সদস্যদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর থাকবে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব। পাশাপাশি চলবে খাতা মূল্যায়নের কাজ।