দাবি স্থায়ী করার, উল্টো বিশেষ ট্রেন বন্ধ করল রেল

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথের বিশেষ ট্রেনছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিশেষ ট্রেনের চলাচল বন্ধ করতে যাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল বুধবার চলার পর বৃহস্পতিবার থেকে এই ট্রেন আর চলাচল করবে না। ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারসহ (ট্রেনচালক) জনবলের সংকটের কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। যদিও আগামী ১০ জুন পর্যন্ত এই ট্রেন চলাচলের কথা ছিল।

চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে যাত্রী কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বিশেষ ট্রেন স্থায়ী করা এবং নতুন আরেকটি ট্রেন চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল। এই দাবি পূরণে রেলমন্ত্রী, রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই দাবি পূরণ না করে উল্টো বিশেষ ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সমিতির নেতাসহ যাত্রীদের মধ্যে।

গত বছরের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত নতুন রেললাইনের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত বছরের ১ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যটক এক্সপ্রেস নামের আরেকটি ট্রেন চালু করে রেল। শুধু ঢাকা-কক্সবাজার রুটের দুটি ট্রেনের প্রতিটিতে ১১৫টি করে আসন বরাদ্দ রাখা হয় চট্টগ্রাম স্টেশনের জন্য। ঢাকা থেকে পরপর দুটি ট্রেন চালু করলেও চট্টগ্রাম থেকে কোনো ট্রেন দেওয়া হয়নি। রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ ক্ষুব্ধ ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও নাগরিক সমাজ ট্রেন চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল। এই পরিস্থিতিতে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বিশেষ ট্রেন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রেল। গত ৮ এপ্রিল এই ট্রেন চলাচল শুরু হয়। চালুর পর থেকে এই ট্রেন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যাত্রীদের চাপে এরপর দুই দফায় বিশেষ ট্রেনের সময় বাড়িয়ে ১০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল।

তবে নতুন করে আর সময় না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (এসিওপিএস) কামাল আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রেলওয়ের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে কক্সবাজার স্পেশাল-৩ ও ৪ ট্রেনটি আগামী ১০ জুন পর্যন্ত চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যান্ত্রিক বিভাগ থেকে ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকট থাকার জানানো হয়েছে। এ জন্য কক্সবাজার বিশেষ ট্রেন বুধবার পর্যন্ত চলবে। ৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বাতিল করা হলো।

বিশেষ ট্রেন বন্ধ ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের এসিওপিএস কামাল আখতার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকটের কারণে এই ট্রেন চালু রাখা যাচ্ছে না।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পূর্বাঞ্চলে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৫০৩ কিলোমিটার। আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে ৫৪টি। মেইল, এক্সপ্রেস ও কমিউটার ট্রেন আছে ৭০টি। পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করে প্রতিদিন গড়ে ৮টি। এসব ট্রেনের জন্য প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১১৫টি ইঞ্জিনের প্রয়োজন। কিন্তু পাওয়া যায় ১০০টির মতো। কখনো কখনো এর চেয়েও কম ইঞ্জিন পাওয়া যায়।

রেলওয়ে সূত্রে জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টায় ছাড়ে। কক্সবাজারে পৌঁছায় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টায়। চট্টগ্রামে পৌঁছায় রাত ১০টায়। যাত্রাপথে ট্রেনটি ষোলোশহর, জানালীহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে থামে এবং যাত্রী পরিবহন করে। মোট ১০টি বগিতে আসন রয়েছে ৪৩৮টি। বিশেষ ট্রেনে শোভন শ্রেণির আসনের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণি আসনের জন্য ১৮৫ টাকা। তবে কক্সবাজার পর্যন্ত এই ভাড়া যথাক্রমে ১৮৫ ও ৩৪০ টাকা।

চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে যাত্রী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সাঈদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, এই ট্রেন তো ১০ জুন পর্যন্ত চলার কথা। এটি স্থায়ী করার পাশাপাশি আরেকটি নতুন ট্রেন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। কিন্তু তা না করে বিশেষ ট্রেনটি বন্ধ করে দিল। এতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মানুষ ট্রেনে করে যাতায়াতের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্ত খুবই হতাশা ও দুঃখজনক।

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৫ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।