মায়ের কাছ থেকে সাহস পেয়েছি

রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে ২১ জুলাই মুঠোফোন ছিনতাই হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী পারিশা আকতারের। এরপর নিজে একা ধরে ফেলেন দুই ‘ছিনতাইকারী’কে। পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁদের। যদিও নিজের মুঠোফোনটি ফেরত পাননি। পারিশা আকতারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিকুজ্জামান

পারিশা আকতার

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনার মুঠোফোনটি উদ্ধার হয়েছে?

পারিশা আকতার: না, এখনো পাইনি।

প্রশ্ন :

পুলিশ কিছু বলেছে?

পারিশা আকতার: পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুত তাঁকে আটক করা হবে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

নতুন মুঠোফোন নিয়েছেন?

পারিশা আকতার: আগের মুঠোফোনটি আমার স্বামী কিনে দিয়েছিলেন। সেটি ছিনতাই হওয়ার পর ভেবেছিলাম দ্রুত উদ্ধার হবে। তাই অপেক্ষা করছিলাম। এদিকে একটি প্রতিষ্ঠান আমাকে না জানিয়ে একটি মুঠোফোন উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে।

প্রশ্ন :

আপনাকে নিয়ে গণমাধ্যমে খবর হলো। আপনি এখন পরিচিত মুখ। কেমন লাগছে?

পারিশা আকতার: আমার ফেসবুক প্রোফাইলে অনেক আগে নিজের সম্পর্কে লিখেছিলাম, সমালোচনা করতে ঘৃণা করি। অপ্রত্যাশিত ব্যক্তির কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পেতে ভালোবাসি। এটাই এখন ঘটছে। খুব ভালো লাগছে।

প্রশ্ন :

পরিচিতজনেরা কী বলেছেন?

পারিশা আকতার: নিজের পরিবার, সহপাঠী ও রুমমেটরা ঘটনার পর সাহস জুগিয়েছে। প্রথম দিকে গণমাধ্যমের সামনে আসতে সংকোচ বোধ হচ্ছিল। ঘটনা জানার পর শ্বশুরবাড়িতে আমার স্বজনেরা আমাকে নিয়ে গর্ব করছে, সমর্থন দিয়েছে।

প্রশ্ন :

আপনি বলেছিলেন, গবেষণা প্রতিবেদনের জন্য সংগৃহীত তথ্য ছিনতাই হওয়া মুঠোফোনে ছিল। প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন?

পারিশা আকতার: নির্দিষ্ট সময়ের এক দিন পরে দিয়েছি। সহায়তা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক এবং বন্য প্রাণী নিয়ে গবেষণা করা আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা।

প্রশ্ন :

ছিনতাইকারী ধরার সাহস কোথা থেকে পেলেন?

পারিশা আকতার: তা জানি না। তবে বিষয়টি আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। অন্যায় হলে মুখের ওপর প্রতিবাদ করার স্বভাব আমার আগে থেকেই রয়েছে। স্পষ্টভাষী বলে পরিচিতজনদের সামনেও মাঝে মাঝে বিব্রত হই।

প্রশ্ন :

সেদিন তো আপনি রাস্তার পাশে বসে কাঁদছিলেন। কেন?

পারিশা আকতার: এক বছর ধরে গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করেছি। তা মুঠোফোনে রেখেছিলাম। আবার মুঠোফোনটি আমার অসম্ভব প্রিয় জিনিস ছিল। তাই রাস্তায় বসে কাঁদছিলাম। অনেকেই সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন।

প্রশ্ন :

তারপর?

পারিশা আক্তার: আমি যখন ক্যাম্পাসে ফেরার প্রস্তুতি নিই, তখন সামনে পড়েন এক ছিনতাইকারী। তিনি অন্যের ফোন নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছিলেন। তাঁকে ধরে ফেলি। পরে তাঁর মাধ্যমে আরেক ছিনতাইকারীকে ঘটনাস্থলে ডেকে আনি। পরে দুজনকে বেঁধে পুলিশে দেওয়া হয়।

প্রশ্ন :

পরিবারে কে কে আছে?

পারিশা আকতার: আমার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাশুর ও দেবর নিয়ে আমার পরিবার। বাবার বাড়িতে মা, বাবা ও দুই ভাই রয়েছে।

প্রশ্ন :

আপনার অনুপ্রেরণা কে?

পারিশা আকতার: আমার মা। বলা যায়, তাঁর কাছ থেকেই আমি সাহস পেয়েছি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: পড়াশোনা শেষে কী করতে চান?

পারিশাআকতার: চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সেটা হয়নি।এখন এমন কোনো চাকরি করতে চাই, যেখানে মানুষের জন্য কাজ করা যাবে।