মণি সিংহের জীবনে জড়িয়ে মেহনতি মানুষের সংগ্রাম

স্মরণসভায় মণি সিংহের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক নিবেদন করা হয়। জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে কমরেড মণি সিংহ ট্রাস্ট এই স্মরণসভার আয়োজন করে। ঢাকা, ৫ জানুয়ারিছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

মণি সিংহের জীবনের মধ্যে মেহনতি মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা ও সংগ্রাম জড়িয়ে আছে। তাঁর নামটিই হয়ে উঠেছিল সংগ্রামের প্রতীক। বিপ্লবের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা, গভীর দেশপ্রেম, মেহনতি মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোসার মতো বহু মহৎ মানবিক গুণের সমাহার ঘটেছিল তাঁর মধ্যে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী, টংক তেভাগা আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা মণি সিংহের ৩৩তম প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা তাঁর সম্পর্কে এই মূল্যায়ন করেছেন। বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এই আয়োজন করে কমরেড মণি সিংহ ট্রাস্ট। সহযোগিতা করেছে দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে)।

জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত মণি সিংহ স্মরণসভায় বক্তারা। ঢাকা, ৫ জানুয়ারি
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

মণি সিংহের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সংগীত, আবৃত্তি, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, আলোচনা ও স্মৃতিচারণা দিয়ে সাজানো ছিল এই স্মরণ আয়োজন। তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। মণি সিংহের সংগ্রামী জীবন ব্যাপ্ত হয়েছিল ব্রিটিশ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কালপর্বে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর জীবনগাথা তুলে ধরতে গিয়ে আলোচকেরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তির সংগ্রাম হয়ে দেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত পর্যন্ত রাজনৈতিক ঘটনাবলির ওপরে আলোকপাত করেন।

সিপিবির সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রক্ষমতা লুটেরাদের দখলে ও সমাজকাঠামো সাম্প্রদায়িকদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিপন্ন হয়ে পড়েছে। একতরফা নির্বাচন করা হচ্ছে। জনগণ এই নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মণি সিংহ সারা জীবন এই সমাজকাঠামো পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করেছেন।’ তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক, মুক্ত সমাজ গঠনের জন্য এই লুটেরা ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যেতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মণি সিংহ ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক দিবালোক সিংহ বলেন, মণি সিংহ শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন, সম–অধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। জুলুম–নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি তাঁর আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি। নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁর আদর্শ অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

আলোচনায় আরও অংশ নেন অধ্যাপক মাহফুজা খানম, অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার, পাটবিজ্ঞানী এ বি এম আবদুল্লাহ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক এ এন রাশেদা, অধ্যাপক এ এস এম গোলাম মরতুজা, শ্রমিকনেতা আবুল কালাম আজাদ, ট্রাস্টের সভাপতি দুর্গাপ্রসাদ তেওয়ারী, যুব ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাফিজ আদনান ভূঁইয়া, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লাকি আক্তার প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা ও মণি সিংহ মেলা উদ্‌যাপন কমিটির সংগঠক আসলাম খান। আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করেন উদীচী, ডিএসকে ও ট্রাস্টের শিল্পীরা। জাতীয় সংগীত দিয়ে শেষ হয় এই স্মরণানুষ্ঠান।