যুব সম্মেলনে বক্তারা: যুবসমাজের একটি অংশ এখনো কাজে নেই

‘বাংলাদেশের যুবসমাজ ও এসডিজি: আজকে দাঁড়িয়ে আগামীর ভাবনা’ শীর্ষক যুব সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে অতিথিরা
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষিত সমাজ, নাগরিক সমাজের বাইরেও সমাজের একটি বড় অংশ আছে, যারা নিজেদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণেই তুষ্ট। যুবসমাজের একটি অংশ এখনো কাজে নেই, শিক্ষায় নেই; উগ্রবাদ, মাদকাসক্তি, বিষণ্নতায় পড়ে আছে। নাগরিক হতে গেলে সমাজের প্রতি কর্তব্য, গণতন্ত্রচর্চায় ভোটাধিকার প্রয়োগও যুবসমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পিছিয়ে থাকলে ও দায়িত্ব পালন না করলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের যুবসমাজ ও এসডিজি: আজকে দাঁড়িয়ে আগামীর ভাবনা’ শীর্ষক যুব সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলা হয়। এ আয়োজনে ইউএনডিপি, ইউনাইটেড নেশনস পোভার্টি–এনভায়রনমেন্ট অ্যাকশন সহযোগী হিসেবে আছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান যারা নগরে বাস করে, তারাই শুধু নাগরিক কি না, সে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, নাগরিক শব্দটার সঙ্গে নগরে যারা বাস করে, তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ মনে হয়। এর বাইরেও একটি সমাজ আছে। যাদের প্রতি হয়তো কিছুটা অবহেলা আছে। এই গোষ্ঠীরও হক আছে, পাওনা আছে, দাবি আছে; সেগুলো স্বীকার করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, গ্রামের মানুষের চাওয়া হচ্ছে, তার বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা পূরণ। অন্যদিকে নগরের মানুষের ভাবনা হচ্ছে সুশাসন, মানবাধিকার। গ্রামে গেলে এই তালিকা পাল্টে যায়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এগুলোই মূল বিচার্য বিষয়। এর সমাধান করতে হবে। এই মানুষকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের প্রাপ্য সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, তরুণেরা সমাজের সবচেয়ে শক্তিমান অংশ। তরুণদের কাছে অনেক প্রত্যাশা। তাঁদের সুপথে পরিচালিত হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সু–উত্তরাধিকারী কখনো উত্তরাধিকার বেচে না, ধ্বংস করে না; বরং সমৃদ্ধ করে। তিনি আশা করেন, তরুণেরা সু–উত্তরাধিকারী হবেন।

শুধু শিক্ষিত সমাজই যুবসমাজের অংশ নয়। এর বাইরেও যুব আছেন উল্লেখ করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই যুবসমাজ সমধর্মী নয়। ওই পিছিয়ে থাকা যুবসমাজের কাছে পৌঁছাতে হবে। যুবসমাজের একটি বড় অংশ কোনো শিক্ষায় নেই, কাজে নেই। তাদের মধ্যে বেশি হচ্ছে নারী। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে তারা দূরে। যুবসমাজের অনেকে মাদকাসক্তি, উগ্রবাদে জড়াচ্ছেন, অনেকে আবার মানসিক অবসাদে ভুগছেন। আত্মহত্যার ঘটনা এখন দেখা যাচ্ছে। এগুলো মোকাবিলা করত হবে। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংস্থা যুবকদের জন্য কাজ করছে। কিন্তু তারপরও কি বলা যায়, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যুবকদের কথা যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে নেওয়া হয়?

ভোটাধিকারের প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, সাম্প্রতিক জনশুমারিতে দেড় থেকে দুই কোটি নতুন ভোটার ২০১৮ সালে পর যুক্ত হয়েছেন। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভোটার তালিকায় যেন নাম থাকে, সে নিশ্চয়তা পেতে হবে। ভোট দেওয়া নাগরিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। যাঁরা ২০১৪ ও ২০১৮ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। সে হিসাবে বলা যায়, চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষ প্রথমবারের মতো ২০২৪ সালে হয়তো ভোটদানের সুযোগ পাবেন। যুবসমাজের কণ্ঠস্বরকে আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট করতে হবে। তাহলেই দেশের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে এগোনো যাবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, ব্র্যাকের পরিচালক (জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি) নবনীতা চৌধুরী, বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।