সুরে-ছন্দে ছায়ানটের আয়োজন ‘শরৎ প্রাতে অরুণ আলো’
ভোরবেলায় ঝিরঝির বৃষ্টির পর স্নিগ্ধ হাওয়া বইছিল। আলো ফুটল বাঁশির সুর আর তবলা ও এসরাজের মেলবন্ধনে। ততক্ষণে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছেন কয়েক শ শ্রোতা ও দর্শক। অনুষ্ঠান শুরু হয় রবীন্দ্রসংগীত ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি’ দিয়ে।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের সঙ্গে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছায়ানট। প্রতিপাদ্য ছিল ‘শরৎ প্রাতে অরুণ আলো’। অনুষ্ঠান হয় সেন্ট যোসেফ স্কুল প্রাঙ্গণে।
দুই পর্বের অনুষ্ঠানে গান, নাট্যাংশ পাঠ ও অভিনয় করে নালন্দার শিশুরা। গানে ‘সংগীত প্রবেশের’ শিশুরা এবং সত্যম দেবনাথ ও মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন। আর বিদ্যালয়টির কালচারাল ফোরামের শিক্ষার্থীরা দুটি সম্মেলক, তিনটি একক গান ও একটি আবৃত্তি পরিবেশন করে।
ততক্ষণে আকাশে দেখা দেয় রোদের ঝলক। অনুষ্ঠানে তখন চলছে সেন্ট যোসেফ স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত একক সংগীত ‘আমারে ডাক দিল কে’, ‘শরতে আজ কোন অতিথি’ এবং ‘শিউলি ফুল শিউলি ফুল’। এ ছাড়া বৃন্দ আবৃত্তি শরৎ এবং সম্মেলক সংগীত ‘তোমার মোহন রূপে কে রয় ভুলে’ দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব।
দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শারোদোৎসব নাট্যাংশ পরিবেশন। তখন দর্শন-শ্রোতায় কানায় কানায় পূর্ণ স্কুল প্রাঙ্গণ। উজ্জীবিত দর্শক-শ্রোতার হাততালিতে অনুপ্রাণিত হন শিল্পীরা।
স্কুলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের অনুষ্ঠান তখন যেন শরতের নরম হাওয়া বয়ে আসে। চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবিতেও ফুটে ওঠে আকাশের নীল মেঘরাশি ও কাশফুল। অভিনয়শিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন কৃষকের মুখের হাসি ও ফসল তোলার উৎসব। যেন চিরচেনা গ্রামবাংলার শান্ত, নির্মল ও স্বপ্নভরা এক সৌন্দর্যের চিত্র।
শারোদোৎসব নাট্যাংশে সম্মেলক সংগীত ছিল ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’, ‘আজ ধানের খেতে’, ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ’ এবং সম্মেলক নৃত্যগীত ‘আমর নয়ন ভুলানো এলে’। একক সংগীত ছিল ‘আনন্দেরই সাগর হতে’, ‘তোমার সোনার থালায়’, ‘নব কুন্দধবলদলসুশীতলা ’ এবং ‘অমল ধবল পালে লেগেছে’।
ছায়ানটের পরিবেশিত নাট্যাংশ পাঠ, গান ও অভিনয়ে ছিল নালন্দার শিশুরা। নাটিকার নির্দেশনায় ছিলেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। তবলায় সুবীর ঘোষ ও গৌতম সরকার, এসরাজে শৌণক দেবনাথ ঋক, বাঁশি বাজান মামুনুর রশিদ এবং কি–বোর্ডে রবিন্স চৌধুরী।
আয়োজকেরা জানান, তাঁরা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে চান। পাশাপাশি তরুণদের মধ্যে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে এবং মানুষের মনে আলো জ্বালাতে এবারের শরৎ উৎসব সেন্ট যোসেফ স্কুলের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করা হয়েছে।
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিবেশনা অসাধারণ হয়েছে। আয়োজনে অভিভাবক ও কলাকুশলীদের যথেষ্ট সাড়া পেয়েছি। আয়োজন সম্পন্ন হওয়ায় আমরা ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত। আমরা হাতে হাত রেখে অন্ধকারে থাকাদের হৃদয়েও আলো জ্বালব।’