নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় আইন সংস্কার চাই

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে দিল মনোয়ারা মনু স্মারক বক্তৃতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন সাদেকা হালিম বক্তব্য দেন
ছবি: প্রথম আলো

সম্পত্তিতে নারীর অধিকার না থাকা এবং থাকলেও বাস্তবে তা না পাওয়ায় দেশের সব শ্রেণির নারীই বৈষম্যের শিকার। কৃষিকাজে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও পুরুষের সমান তাঁদের মূল্যায়ন করা হয় না। নারীর সম–অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় আইন প্রণয়নসহ সিডও সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে দিল মনোয়ারা মনু স্মারক বক্তৃতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন সাদেকা হালিম এসব কথা বলেন। দিল মনোয়ারা মনু স্বজন পর্ষদের উদ্যোগে এবং এএলআরডির সহযোগিতায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ‘সম্পত্তিতে নারীর সম–অধিকার এবং সিডও সনদের সংরক্ষণ প্রত্যাহারপূর্বক পূর্ণ বাস্তবায়নের প্রাসঙ্গিকতা’ বিষয়ে তিনি স্মারক বক্তৃতা দেন।
সাদেকা হালিম বলেন, সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ন্যায্যতা প্রয়োজন। নারীর সমতা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই টেকসই উন্নয়নের পথ সুগম হয়। বেশির ভাগ নারীর নিজের জমি নেই। তবে কৃষি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। নারীরা কৃষিতে যুক্ত হলেও পুরুষের সমান মূল্যায়ন তাঁরা পান না।

স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক সাদেকা হালিম জমি না থাকলেও কৃষিকাজে যুক্ত নারীদের কৃষাণি কার্ড দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজকাঠামো এমন যে উৎপাদন কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিরাই সমাজের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। নারীরা ক্ষমতাস্তরের একদম নিচে অবস্থান করেন।

দেশে উত্তরাধিকারের বিষয়টি জটিল উল্লেখ করে অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, উত্তরাধিকার বিষয়ে অভিন্ন কোনো আইন নেই। যেসব বিধানের ওপর ভিত্তি করে সম্পদ বণ্টন করা হয়, তাতে বৈষম্য আছে। সংবিধানে নারী–পুরুষ সম–অধিকারের স্বীকৃতি থাকলেও বাস্তবে তা প্রতিফলিত হয় না। সম্পত্তিতে নারীর অধিকার বাবা, ভাইয়ের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। সম্পত্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সমান অধিকারবিষয়ক কোনো আইন গৃহীত হয়নি। মুসলিম ছাড়াও হিন্দুধর্মের নারীরাও বৈষম্যের মধ্যে থাকেন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের অবস্থাও সন্তোষজনক নয়।

বাংলাদেশ জাতিসংঘের নারী অধিকার বিল বা সিডও সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। সনদের একটি ধারায় নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে জাতীয় আইন সংস্কার ও তা প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়। আরেকটি ধারায় বিয়ে ও পারিবারিক আইনে নারীর সমান অধিকারের বিষয় আছে। সরকার এই দুটি ধারা সংরক্ষণ করে রেখেছে। বিভিন্ন নারী ও মানবাধিকার সংগঠন এসব ধারা সংরক্ষণ বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে।

সাদেকা হালিম বলেন, নারীর সম–অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনি অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হবে। সেই সঙ্গে সিডওর সব ধারার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সিডও সনদের দুটি ধারা সংরক্ষিত রাখায় নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্য আইনগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়।

সাদেকা হালিম স্মারক বক্তৃতায় সম্পদে লিঙ্গ সমতা বিধান, উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন, হিন্দু নারীদের আইনি অধিকার প্রদান এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের জমিতে অধিকার দেওয়ার সুপারিশ করেন। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি না থাকলে এই পরিবর্তন সম্ভব নয়।

এএলআরডির সহসভাপতি রওশন আরা ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।