‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে নিরাপত্তার সম্পর্ক কম’

রাজধানীর পান্থপথে দৃকপাঠ ভবনে ‘বাংলাদেশে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলাপচারিতায়  ইতিহাসবিদ, গবেষক আফসান চৌধুরী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম
ছবি: দৃক

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে নিরাপত্তার সম্পর্ক কম বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের মতে, আইনটি ভাসা-ভাসা রাখা হয়েছে ইচ্ছা করেই, যাতে যেকোনো ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। ডিজিটাল দুনিয়া না বুঝেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি করা হয়েছে।

বুধবার রাজধানীর পান্থপথে দৃকপাঠ ভবনে ‘বাংলাদেশে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলাপচারিতা এসব কথা উঠে আসে।

দৃকের আয়োজেন এ আলাপচারিতায় ইতিহাসবিদ ও গবেষক আফসান চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হয়রানির জন্য, এর সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তার সম্পর্ক কম। ডিজিটাল দুনিয়া না বুঝেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি করা হয়েছে। কারণ, ডিজিটাল দুনিয়ায় যেকোনো জায়গা থেকেই যা খুশি বলা যায়। দেশের বাইরে থেকে যাঁরা সরকারের সমালোচনা করছেন, তাঁদের কথা মানুষ বেশি শুনছে এবং ভিউ (দেখা) বেশি হচ্ছে...গ্রামের মানুষ পর্যন্ত এসব দেখছে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, এটা সামলাতে পারবে না।

সরকার ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম নিয়ে চিন্তিত উল্লেখ করে আফসান চৌধুরী আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মূলত এসব প্ল্যাটফর্মকে ঠেকাতে করা হয়েছে। কারণ, পত্রিকা ও সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যত আইন হচ্ছে, তা এ ধরনের প্ল্যাটফর্মকে ঠেকানোর জন্য। তিনি বলেন, দেশের মানুষের সমালোচনা বা বিরোধিতার চেয়ে দেশের বাইরে থেকে যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁদের নিয়ে চিন্তিত। সরকারের বড় বিরোধিতা আসে দেশের বাইরে থেকে। এটা আটকানোর সুযোগ নেই।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে আফসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের কাঠামোগতভাবে স্বাধীনতা সম্ভব নয়। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গণমাধ্যম এখন বড়লোকদের স্বার্থের প্রয়োজনে হচ্ছে।

দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম বলেন, ‘যে ব্যবস্থার মধ্যে আমরা আছি, সেখানে যে নিয়মগুলো আছে, তা আমাদের অধিকারের জন্য কখনোই করা হয়নি। আমার যেন কখনো প্রশ্ন করতে না পারি। যে জিনিসগুলো হচ্ছে, যে অন্যায়গুলো হচ্ছে, সেগুলোকে জায়েজ করার জন্য, প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নানা ধরনের আইন তৈরি করা হচ্ছে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে এই আলোকচিত্রী আরও বলেন, আগে ছিল ৫৭ ধারা। তখন থেকেই এটা নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা ছিল। এর পরিবর্তনের কথাও বলা হয়। কিন্তু ৫৭ ধারার যে আপত্তিগুলো ছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার সবই রাখা হয়েছে।

শহিদুল আলম বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কেউ অপরাধ করেছে কি করেনি, তা নির্ধারণ করে পুলিশ। পুলিশের কিন্তু কোনো প্রশিক্ষণ নেই সেটা বিশ্লেষণ করার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি খুব ভাসা–ভাসা। এটা ইচ্ছা করেই রাখা হয়েছে। যাতে যেকোনো ক্ষেত্রে যেকোনো কিছু করা সম্ভব।