বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব এসির খোঁজ

বছরে দুবার সার্ভিসিং করালে এসি কোনো ঝামেলা করে নাপ্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

গরমের তীব্রতা থেকে বাঁচতে এসির পরশ চান সবাই। বাড়ির বিভিন্ন ঘরে এসি লাগানোর আগে চিন্তা করতে হয় বিদ্যুৎ বিলের। অনেক ক্ষেত্রে বেশি বিদ্যুৎ বিলের কারণে ঘরে নতুন এসি লাগাবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন ক্রেতারা। তাঁদের জন্য আছে বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী এসি। এ ধরনের এসি ব্যবহারে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল থাকবে হাতের নাগালে।

এ বিষয়ে সনি-স্মার্টের মহাব্যবস্থাপক সারোয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী এসি বলতে এখন আমরা ইনভার্টার এসিকে বুঝি। এ এসিতে এমন একটি সেনসর থাকে, যা ঘরের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে কমপ্রেসর পুরোপুরি বন্ধ না করেই এসির মোটরের চলার গতি কমিয়ে দেয়। তাই কম শক্তিতে চলার কারণে বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় কম। ফলে বিদ্যুৎ বিলও কম আসে।’

সারোয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, ইনভার্টার এসির বড় সুবিধা হচ্ছে, এসির কমপ্রেসর মোটরটি নিজস্ব চলার গতি প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করতে পারে। সাধারণ এসির কমপ্রেসর বারবার চালু-বন্ধ হয় বলে বিদ্যুৎ খরচও হয় বেশি।

অনেকেই ভাবেন, তাঁদের ঘর যেহেতু ছোট, তাই ছোট ঘরের জন্য ইনভার্টার এসি উপযুক্ত কি না? এমন ভাবনায় যাঁরা আছেন, তাঁরা নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন ইনভার্টার এসি। কারণ, যেকোনো আয়তনের কক্ষের জন্য এ প্রযুক্তির এসি ব্যবহার করা যায়। বড় ঘরের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল কিছুটা বেশি এলেও সে ক্ষেত্রে অন্য এসির তুলনায় ইনভার্টার এসিতে তা কম হয়।

ইনভার্টার এসি ছাড়াও যেভাবে ব্যবহার করলে কমবে বিদ্যুৎ বিল—

টাইমার ব্যবহার

সারা রাত এসি না চালিয়ে টাইমারের সাহায্যে নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত এসি চালানো যেতে পারে। রাতে ঘুমানোর সময় অনেকক্ষণ এসি চললে রুম এবং শরীর ঠান্ডা হয়ে থাকে। তাই টাইমার সেট করে রাখা শরীরের জন্য ভালো। এভাবে টাইমার সেট করে দিলে নির্দিষ্ট সময় পর এসি বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে কমে আসবে বিদ্যুৎ বিল।

সময়মতো সার্ভিসিং করানো

সারা বছর এসি ব্যবহার করা হয় না। বিশেষ করে শীতকালে। ফলে এতে ধুলাবালু জমে থাকে। ফলে এসিতে সমস্যা তৈরি হয়ে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হতে পারে। বছরে দুবার সার্ভিসিং করালে এসি কোনো ঝামেলা করে না। বিদ্যুৎ বিলও তুলনামূলক কম আসে।

দরজা-জানালা বন্ধ রাখা

এসি ব্যবহারের অন্যতম শর্ত হলো ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ করে চালানো। জানালা-দরজা বন্ধ রেখে এসি চালালে ঘর তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়। তখন বিদ্যুৎ খরচও কম হয়।

তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রাখা

অনেকেই মনে করেন, বেশি গরমে ঘর সবচেয়ে ঠান্ডা রাখতে এসি ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা যাবে। এটি ভুল ধারণা। মানবদেহের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হলো ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সুতরাং এসিকেও সেই তাপমাত্রায় রাখতে হবে। এতে শরীর ভালো থাকবে। এসিতে বিদ্যুৎ খরচও কম হবে।

পাওয়ার সুইচ বন্ধ রাখা

ইলেট্রনিক ডিভাইস অপ্রয়োজনে চালিয়ে রাখা উচিত নয়। তাই এসি ব্যবহারের প্রয়োজন না থাকলে পাওয়ার সুইচ বন্ধ রাখতে হবে। সেই সঙ্গে খুলে রাখতে হবে প্লাগ। অধিকাংশ মানুষ শুধু রিমোট দিয়ে এসি বন্ধ করে রাখেন। ফলে কম্প্রেসর নিষ্ক্রিয় থাকলেও পাওয়ার সুইচ চালু থাকলে প্রচুর শক্তি অপচয় হয়। যে কারণে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে।

বিদ্যুৎ কতটা সাশ্রয় করা যায়, সেটা তো জানা হলো। সনি-স্মার্টের মহাব্যবস্থাপক সারোয়ার জাহান চৌধুরী জানিয়েছেন পরিবেশবান্ধব এসির কথাও।

তিনি বলেন, ‘ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকের ক্যানসার, চোখে ছানি পড়া বেড়ে যায়। কমে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা।

সিএফসি, মিথেনসহ নানা গ্যাসের প্রভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে ওজোন স্তর। এসব গ্যাস সাধারণত ফ্রিজ ও এসির সিস্টেমে, ইনহেলারে, প্লাস্টিক ফোম তৈরি করায় ব্যবহৃত হয়।

সারোয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবমুক্ত থাকতে আর ওজোন স্তরের ক্ষয় ঠেকাতে সাধারণ মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য সিএফসিমুক্ত এসি কিনতে পারেন। সিএফসি, এইচএফসি গ্যাসসমৃদ্ধ যন্ত্রপাতির ব্যবহার বন্ধ করলে শুধু পরিবেশ নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও এটি ভালো হবে।