শিগগিরই দেশের সব অঞ্চল জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ৫০ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। চট্টগ্রাম, ৩০ মেছবি: সংগৃহীত

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, চরমপন্থী ও জলদস্যুদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে অপরাধীদের দমন করা হবে। শিগগিরই দেশের সব অঞ্চল জলদস্যু ও ডাকাতমুক্ত ঘোষণা করা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় র‍্যাব-৭ কার্যালয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ৫০ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেন। সেই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আজ এখানে একজন নারী জলদস্যুও আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁরা কখনো অত্যাচারিত বা নিপীড়িত হয়ে বাধ্য হয়ে এসব কাজে জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় প্রভাবশালী লোকেরাও তাঁদের বাধ্য করেন এসব কাজে জড়াতে। চট্টগ্রামসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। এসব এলাকায় জলদস্যুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।’

সুন্দরবনের প্রসঙ্গ টেনে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সুন্দরবনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান রক্ষায় ২০১২ সালে র‍্যাবের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করে তাদের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র‍্যাবের দুঃসাহসিক অভিযানে সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হয়। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। তারা যাতে আর সে কাজে না ফেরে, সে জন্য তাদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হচ্ছে। আজ তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। কেউ ব্যবসা করছে বা অন্য কাজ করছে। সুন্দরবনে জলদস্যুদের ভালো অবস্থা দেখে আজ অন্যরাও উদ্বুদ্ধ। যাঁরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।’

আত্মসমর্পণের সময় দেশি-বিদেশি ৯০টি অস্ত্র এবং ২৮৩ রাউন্ড গুলি জমা দেন জলদস্যুরা। চট্টগ্রাম, ৩০ মে
ছবি: সংগৃহীত

যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে না, তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আর যাঁরা ফিরে আসেননি, আমরা কাউকে ছাড় দেব না। যেকোনো মূল্যে অপরাধীদের দমন করব। তারা যেন অপরাধ করার চিন্তাও না করে, সে কাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করছে। আমরা খুব শিগগির সব অঞ্চল জলদস্যু ও ডাকাতমুক্ত ঘোষণা করব। আমরা কাউকে ক্ষমা করব না। ’

চরমপন্থী নির্মূলের তথ্য তুলে ধরে আসাদুজ্জামান বলেন, পাবনায় ৬০০, সিরাজগঞ্জে তিন শর বেশি চরমপন্থী গ্রুপের নেতা–কর্মী আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁদেরও সরকার সহযোগিতা করেছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও খুনের মামলা আছে, তাদের কোনোভাবে সহযোগিতা করা হবে না।

র‍্যাব-৭–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‍্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা। আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মধ্যে বক্তব্য দেন মাহমুদ করিম ও জসীম উদ্দীন।

কোন গ্রুপের কতজন আত্মসমর্পণ করলেন

অনুষ্ঠানে রহিমা খাতুন নামের এক নারী জলদস্যুসহ ৫০ জন আত্মসমর্পণ করেন। তাঁদের মধ্যে জলদস্যু জসিম গ্রুপের ছয়জন, মিন্টু, কালু ও বদল্ল্যার পাঁচজন করে ১৫ জন, করিম, রমিজ, ইয়ার আলী, সুলতান ও কালা রশিদের তিনজন করে ১৫ জন, নাছির ও জালালের দুজন করে চারজন এবং অন্যান্য ১০ জন। আত্মসমর্পণের সময় দেশি–বিদেশি ৯০টি অস্ত্র এবং ২৮৩টি গুলি জমা দেন তাঁরা।

আত্মসমর্পণ করা মাহমুদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাচক্রে জলদস্যু হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। এই কারণে পরিবার ও স্বজনদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হতো। এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চান। এ জন্য আত্মসমর্পণ করেছেন। যাঁরা অন্ধকারে আছেন তাঁদের আলোর পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।