দেশেই ক্যানসার-চিকিৎসা বিষয়ে আলোচনা
দেশে বয়স্কদের পাশাপাশি তরুণদের কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে
দেশে বয়স্কদের পাশাপাশি তরুণদেরও কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে। মূলত প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ফাস্ট ফুড খাওয়া, কায়িক পরিশ্রম না করা, ডিভাইসে সময় কাটানো ও ধূমপানের কারণে বাড়ছে এই ঝুঁকি।
এভারকেয়ার হাসপাতালের রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আরমান রেজা চৌধুরী এ কথা বলেন। ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এসকেএফ অনকোলজির আয়োজনে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার-চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় এবারের অতিথি ছিলেন তিনি। এ পর্বে আলোচনা করা হয় কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি, চিকিৎসা, স্ক্রিনিং ও প্রতিরোধ নিয়ে। পর্বটি ২৪ মার্চ সরাসরি সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
আলোচনার শুরুতে উপস্থাপক নাসিহা তাহসিন তথ্য দিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাপী কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। ২০২২ সালের গ্লোবোক্যান ডেটা অনুযায়ী, কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬ হাজারের বেশি। ধারণা করা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হবে। পরে উপস্থাপক বাংলাদেশে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের কারণ সম্পর্কে জানতে চান? উত্তরে ডা. আরমান রেজা চৌধুরী বলেন, ‘জিনগত কিংবা বংশগত কারণে কোলোরেক্টাল ক্যানসার হতে পারে; অর্থাৎ পরিবারে কারও কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে অন্য সদস্যদের এই ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে জীবনযাত্রার মানের কারণেও কোলোরেক্টাল ক্যানসার হতে পারে। এ ছাড়া কোলোরেক্টালে পলিপ সৃষ্টি হলে সেখান থেকেও ক্যানসার হতে পারে।’
কোলোরেক্টাল ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো সম্পর্কে ডা. আরমান রেজা চৌধুরী বলেন, ‘কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ক্ষেত্রে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ রিস্ক ফ্যাক্টর। যাঁদের বয়স ৫০ বছরের বেশি, তাঁদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে আমরা কম বয়সীদের মধ্যেও অনেককেই পাই, যাঁরা কোলোরেক্টাল ক্যানসারে ভুগছেন। ভৌগোলিক অবস্থান, খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত ওজন ও শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাবেও কোলোরেক্টাল ক্যানসার হতে পারে।’
বয়স্কদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে বলা হলেও বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে এর ঝুঁকি বেশি। উপস্থাপক এর কারণ জানতে চাইলে ডা. আরমান রেজা চৌধুরী বলেন, ‘এর প্রধান কারণ হলো প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ফাস্ট ফুড। এ ছাড়া এখন তরুণেরা অনেক বেশি কম্পিউটারে কাজ করেন। ফলে কায়িক পরিশ্রম তেমন হয় না। বর্তমানে খেলাধুলার প্রবণতাও অনেকটাই কমে এসেছে। অবসরযাপনে এখন মানুষ বেশি ডিভাইস নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকছেন। সেই সঙ্গে ধূমপানের কারণেও এটি দেখা যায়। এসব কারণেই মূলত আমাদের দেশে তরুণদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।’
প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক কোলোরেক্টাল ক্যানসারের স্ক্রিনিং সম্পর্কে জানতে চান। ডা. আরমান রেজা চৌধুরী বলেন, ‘সব ক্যানসারের ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের ধারণা, স্ক্রিনিং ক্যানসার রোগীদের জন্য। কিন্তু ব্যাপারটি এমন নয়; স্ক্রিনিং আসলে সাধারণ মানুষের জন্য। যদি কেউ জানতে চান তাঁর ক্যানসারের ঝুঁকি আছে কি না, তবে তিনি স্ক্রিনিং করাতে পারেন। বাংলাদেশে সাধারণত দুভাবে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের স্ক্রিনিং করানো হয়ে থাকে—কোলোনোস্কপি এবং ফিকাল অকাল ব্লাড টেস্ট।’
যেহেতু বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই কত বছর বয়স থেকে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের স্ক্রিনিং শুরু করা উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. আরমান রেজা চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণত ৪৫ বছর বয়স থেকে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের স্ক্রিনিং শুরু করে দেওয়া উচিত। যদি কারও পরিবারে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, তবে তাঁর যে বয়সে ক্যানসার ধরা পড়েছে, এরও ১০ বছর আগে থেকেই এর স্ক্রিনিং শুরু করে দেওয়া উচিত।’
কোলোরেক্টাল ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে ডা. আরমান রেজা চৌধুরী বলেন, ‘কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ক্ষেত্রে কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য আবার কখনো ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া মলের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে। ওজন কমে যেতে পারে। রক্তশূন্যতাও দেখা দিতে পারে।’
বাংলাদেশে দেখা যায়, ক্যানসার শনাক্ত হলেই অনেক রোগী দেশের বাইরে চলে যান। এর কারণ কী এবং দেশ ও দেশের বাইরে ক্যানসারের চিকিৎসার পার্থক্যটি আসলে কেমন? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. আরমান রেজা চৌধুরী বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আসলে দেশেই যে উন্নত মানের চিকিৎসা রয়েছে, অনেকেই তা জানেন না। বিষয়টি নিয়ে অবগত না থাকার কারণেই এটা হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য সিনিয়র থেকে শুরু করে জুনিয়র পর্যন্ত বেশ ভালো ভালো সার্জন রয়েছেন। আমাদের দেশে রেডিয়েশনের অপ্রতুলতা থাকলেও বিভিন্ন জায়গায় উন্নত রেডিয়েশন বলতে যা বোঝায়, অর্থাৎ আইএমারটি, ভিম্যাট, রেপিডার্কের মতো চিকিৎসাগুলো রয়েছে।’