ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ নেওয়ার প্রসঙ্গ আলোচনায়

  • প্রতিনিধিদলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে  

  • বিভিন্ন বৈঠকে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হবে

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী পরিষদের প্রতিনিধিদল ধানমন্ডিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। ঢাকা, ২৬ মে
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল রোববার ঢাকায় এসেছে। প্রতিনিধিদলটির তিন দিনের সফরে বিভিন্ন বৈঠকে বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের প্রসঙ্গটি গুরুত্ব পাবে।

ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রাসঙ্গিকভাবেই মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লাভের অংশ বাংলাদেশ থেকে কবে নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারবে, তা আলোচনায় আসবে।

প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংগঠনটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান স্টিভেন কোবোস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। কোবোসের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটির সদস্যদের বড় অংশ জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

প্রতিনিধিদলটি সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হক, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়ার সঙ্গে আলোচনা করবে প্রতিনিধিদলটি।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ ব্যবসায়ী পরিষদের প্রতিনিধিদলের সম্মানে আগামীকাল (সোমবার) নৈশভোজের আয়োজন করেছি। সেখানে তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে।’

বাংলাদেশের একজন কূটনীতিক প্রথম আলোকে জানান, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য গঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্র–বাংলাদেশ ব্যবসায়ী পরিষদ। পরিষদের কাজের অন্যতম অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে তুলনামূলক ও স্বচ্ছ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে দুই দেশের সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা। এ ছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা চুক্তি (টিফা) নিয়ে বার্ষিক বৈঠকের জন্য দুই দেশের সরকারের কাছে সমন্বিত মূল্যায়নের ভিত্তিতে উপাত্ত সরবরাহ করাও পরিষদের কাজের অন্যতম অংশ।

প্রতিনিধিদলের সফরের অগ্রাধিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক কূটনীতিক প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। খুব স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে ডলার–সংকটের প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের লাভের অংশ কবে নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারবে, তা আলোচনায় তুলবে প্রতিনিধিদলটি।

জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান গত শনিবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, স্টিভেন কোবোসের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র–বাংলাদেশ ব্যবসায়ী পরিষদের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকায় যাচ্ছে। প্রতিনিধিদলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনে বিজয়ের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানাবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বৈঠকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে তাঁদের আলোচনার কথা রয়েছে।

অন্য একজন কূটনীতিক প্রথম আলোকে জানান, সম্প্রতি ঢাকা সফরের সময় মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ডলার–সংকটের কারণে তাঁর দেশের ব্যবসায়ীদের লভ্যাংশ এখানে আটকে থাকার প্রসঙ্গ তোলেন। আর ডোনাল্ড লুর সফরের ঠিক আগের দিন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ঢাকা সফরে আসা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গেও আলোচনা করবে।  

এদিকে ওয়াশিংটন ও ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো প্রথম আলোকে জানিয়েছে, ডলার–সংকটের কারণে গত কয়েক মাসে বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি মার্কিন কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ দিতে পারছে না বাংলাদেশ। আবার উল্লেখযোগ্য কিছু প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধেও দেরি হচ্ছে। এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের অর্থের পরিমাণ বিপুল অঙ্কের না হলেও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান মিলে টাকার পরিমাণটা উল্লেখ করার মতো। ফলে বাংলাদেশের ডলার–সংকটের কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে।  

জানতে চাইলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর রোববার প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি ব্যবসায়ী পরিষদের প্রতিনিধিদলের কাজ হচ্ছে দুই দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগে সহায়ক ভূমিকা রাখা। ফলে ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশের প্রেক্ষাপটে ডলার–সংকটের কারণে মার্কিন ব্যবসায়ীদের লভ্যাংশ দেশে নিতে না পারার বিষয়টি উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের প্রেক্ষাপটে এ বিষয়টি তাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। এর পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি অর্থাৎ আর্থিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা-বোঝার চেষ্টা করবে দলটি।