নির্দেশনা কাগজেই, ক্যাম্পাসেই আছেন অছাত্র ছাত্রলীগ নেতারা

১৫ মার্চের মধ্যে অছাত্রদের ক্যাম্পাস ও হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেই।

ছাত্রত্ব না থাকা শিক্ষার্থীদের ১৫ মার্চের মধ্যে ক্যাম্পাস ও হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর ছাত্রত্ব নেই এ রকম কাউকে পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়। কিন্তু এই নির্দেশনা কেবল কাগজেই। ছাত্রত্ব না থাকার পরও হল দখল করে ক্যাম্পাসে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনসহ সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদধারী অন্তত ২৫ নেতা।

নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। হলে অছাত্রদের দখলে থাকা আসন উদ্ধারেও নেওয়া হয়নি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ। অবশ্য ক্যাম্পাস অছাত্রমুক্ত করার সক্ষমতা বর্তমান কর্তৃপক্ষের নেই বলে মনে করেন শিক্ষকনেতারা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এই নির্দেশনা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয়।

নির্দেশনা কার্যকরের বিষয়ে উপাচার্য শিরীণ আখতারের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। উপাচার্য কার্যালয়ে গেলেও তিনি দেখা করতে রাজি হননি। মুঠোফোনে বিষয়টি উল্লেখ করে খুদে বার্তা দিলেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, হলের আসন অবৈধ দখলমুক্ত করতে কাজ শুরু করেছেন। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে।

২০১৪ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি আবাসিক হলে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেয় ছাত্রলীগ। এখন সাতটি ছাত্র হলের ১ হাজার ৮৮টি কক্ষের ১ হাজারটি ছাত্রলীগের দখলে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ছাড়াও বর্তমানে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র ফেডারেশনের কার্যক্রম রয়েছে। এ সংগঠনগুলোতে কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি হয়। ছাত্রত্ব আছে এমন নেতারাই পদ পান। অন্যদিকে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র সেনা, ছাত্র অধিকার পরিষদ—এ চার সংগঠনের প্রকাশ্যে কোনো কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের ছয় শিক্ষাবর্ষের মধ্যে স্নাতক ও দুই শিক্ষাবর্ষের মধ্যে স্নাতকোত্তর পাস করতে হবে। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী সব মিলিয়ে আট বছর ক্যাম্পাসে থাকতে পারবেন। কিন্তু আট বছর পরও নেতারা ক্যাম্পাসে আছেন, হলেও থাকছেন। 

অছাত্রদের হলে অবস্থান করার বিষয়টি সামনে এসেছে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হকের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর। ওই ছবিতে দেখা যায়, সভাপতির পা টিপছিলেন সংগঠনের দুই নেতা। রেজাউল হক স্নাতকোত্তর পাস করেছেন ২০১৩ সালে। এরপরও শাহ আমানত হলের ৩১১ নম্বর কক্ষটি এখনো রেজাউল হকের দখলে। 

ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন ১২ বছর আগে। শাহজালাল হলের দুই আসনবিশিষ্ট ৩০৬ নম্বর কক্ষটি একাই দখল করে থাকেন। ২০১৬ সালে স্নাতক শেষ করলেও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেননি।

সহসভাপতি নাছির উদ্দিন ১৩ বছর আগে, সহসভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ ১২ বছর আগে ভর্তি হন। অন্যদিকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু মুন্সী, সাইদুল ইসলাম, শামসুজ্জামান চৌধুরী, সহসভাপতি মইনুল ইসলাম, আবু বকর তোহা ভর্তি হন ১১ বছর আগে। তাঁদের মধ্যে কারও ক্যাম্পাস ত্যাগের কোনো আলামত নেই। ক্যাম্পাসে থাকার জন্য দিচ্ছেন নানা অজুহাত।

নির্দেশনামতে ক্যাম্পাসে ছাড়বেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, তিনি যেহেতু একটি সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন, তাই তাঁর এ মুহূর্তে ক্যাম্পাস ত্যাগ সম্ভব নয়। বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে তাঁকে আসতে হবে। আর তিনি হলে যে কক্ষটিতে থাকছেন, সেখানে অন্য কাউকে কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ দিলে হল ত্যাগ করবেন। একই কথা বলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের দাবি, তাঁর স্নাতকোত্তর এখনো সম্পন্ন হয়নি। একটি পরীক্ষার জন্য এখনো সনদ পাননি। ওই পরীক্ষা দিয়ে তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করবেন। তবে ছাত্রত্ব না থাকার পরও কীভাবে পরীক্ষা দেবেন জানতে চাইলে ইকবাল হোসেন বলেন, বিশেষ ক্ষমতাবলে তিনি পরীক্ষায় বসার চেষ্টা করবেন। 

বর্তমান প্রশাসনের আমলে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে না বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক। তিনি বলেন, ‘নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়মের সংবাদ আমরা পেয়েছি, প্রশাসনের শিক্ষকেরা এখন পরস্পরবিরোধী অবস্থান করছেন। সবকিছু মিলিয়ে এ ভঙ্গুর প্রশাসনের পক্ষে এ ধরনের ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা নেই।’