উদ্বোধনের চার মাস পর সড়কে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি

চট্টগ্রাম নগরের পোর্ট কানেকটিং রোডে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছে ওয়াসা। নয়াবাজার, ২৩ মার্চ
ছবি: জুয়েল শীল

ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের সংস্কার ও উন্নয়নকাজ শেষ করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লেগেছিল পাঁচ বছর। নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। কাজ শেষ হওয়ার পর চার মাস আগে সড়কটির উদ্বোধন করা হয়। এতে মানুষ যখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন, তখন খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। বর্ষা মৌসুমের আগমুহূর্তে এমন কাটাকাটির কারণে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত স্থানীয় বাসিন্দারা।

চট্টগ্রাম নগরের পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডে এই গর্ত খোঁড়ার কাজ চলতি সপ্তাহে শুরু করে ওয়াসা। অথচ সড়কটি সংস্কার ও উন্নয়নে ব্যয় হয়েছিল ১৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গত বছরের ৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী পিসি রোডের উদ্বোধন করেছিলেন। এ সড়ককে অর্থনৈতিকভাবে ‘লাইফলাইন’ বলা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারা দেশে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন পরিবহনচালকেরা।

চট্টগ্রাম নগরের পোর্ট কানেকটিং রোডে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছে ওয়াসা। বর্ষা মৌসুমের আগমুহূর্তে এমন কাটাকাটির কারণে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত স্থানীয় বাসিন্দারা। নয়াবাজার, ২৩ মার্চ
ছবি: জুয়েল শীল

ওয়াসা সূত্র জানায়, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় বাসাবাড়িতে পানির সংযোগ দেওয়া হবে। এ জন্য পাইপ বসাতে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। পিসি রোডের পাশে প্রায় ১০০ বাসাবাড়িতে পানির সংযোগ দেওয়ার কাছ চলছে।

আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের জুনে।

নতুন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাকসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, বাসাবাড়িতে পানির সংযোগ দেওয়ার জন্য সড়ক কাটতে হচ্ছে। এ জন্য তাঁরা আগেই আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন এখন অনুমতি দিয়েছে। তাই এ সময়ে এসে কাজ শুরু করা ছাড়া বিকল্প নেই। আর সড়কের কাটাকাটি করার জন্য সিটি করপোরেশনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক মাকসুদ আলম দাবি করেছেন, সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চললেও তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। মেশিন দিয়ে সড়কের একটি নির্দিষ্ট অংশ তুলে নেওয়া হচ্ছে। পাইপ বসানোর পর তুলে আনা অংশ পুনরায় আগের জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর এমনভাবে সংস্কার করে দেওয়া হবে, যাতে কাটাকাটি হয়েছে, তা বোঝা না যায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের মাঝখানে মেশিন দিয়ে গর্ত করার কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। মেশিন দিয়ে সড়কের পিচ (কার্পেটিং) টুকরা টুকরা করে তুলে আনা হচ্ছিল। বাসাবাড়িতে সংযোগ দেওয়ার জন্য সড়কের মাঝবরাবর থেকে ফুটপাত পর্যন্ত লম্বালম্বি করে কাটা হচ্ছিল। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর গর্তগুলো করা হচ্ছে। এভাবে সড়কটিতে প্রায় ১০০টি গর্ত করা হবে।

ওয়াসার এমন খোঁড়াখুঁড়িতে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা ফয়েজ আলী প্রথম আলোকে বলেন, কত সুন্দর একটা রাস্তা। কাজ শেষ হয়েছে বেশি দিনও হয়নি। সংস্কারকাজ চলার সময় অসহনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। এখন স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারছেন। কিন্তু ওয়াসার তা যেন সহ্য হচ্ছে না। তাই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে দিল। আবার দুর্ভোগ শুরু হবে।

নেওয়াজ উদ্দিন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ওয়াসা খোঁড়াখুঁড়ির আর সময় পেল না। কিছুদিন পর বর্ষা শুরু হবে। এর আগেই সড়কে কাটাকাটি শুরু হলো। গর্ত করা হলেও পরে তা আর ঠিকভাবে সংস্কার করা হয়নি।

কাজ শেষ হওয়ার বছর পার না হতেই খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতির প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, পানির সংযোগের জন্য অনুমোদন দিতে হয়। তবে ওয়াসা থেকে ক্ষতিপূরণ নেওয়া হয়েছে। খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ হলে তা সংস্কার করে দেওয়া হবে।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সিকান্দার খান প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের নতুন রাস্তা করার সেখানে ওয়াসা খোঁড়াখুঁড়ি করছে। এর মানে হচ্ছে সংস্থা দুটির মধ্যে সমন্বয় নেই। সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে কষ্ট পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মানুষের ভোগান্তি যাতে না হয়, এ ব্যাপারে ভবিষ্যতে সংস্থাগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করবে, এটি আশা করেন তাঁরা।