বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না, ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হয়েছে

মাওলানা ভাসানীর ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা। জাতীয় প্রেসক্লাব, ৩০ মে। ছবি: দীপু মালাকার

বাংলাদেশ অভিন্ন নদীর পানি পাচ্ছে না; অথচ ভারতকে ট্রানজিটের সব রকমের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারছে না।

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার সকালে মাওলানা ভাসানী ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ মন্তব্য করেন। মাওলানা ভাসানী অনুসারী পরিষদ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

এ সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে প্রধান অতিথির দায়িত্ব পালন করেন সাবেক মন্ত্রী জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার।

প্রধান অতিথি বলেন, ‘ভারত ফারাক্কায় পদ্মা নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে আমাদের প্রাপ্য পানি থেকে বঞ্চিত করেছে। এখন তিস্তা, কুশিয়ারা নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে আমরা পানির হিস্যা আদায় করতে পারিনি। অথচ আমরা কোনো জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারছি না।’ তিনি বলেন, মাওলানা ভাসানী অসুস্থ শরীরে জীবনে শেষ পর্যায়ে দেশ ও মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য ফারাক্কা বাঁধের প্রতিবাদের ১৯৭৬ সালের ১৬ মে লংমার্চ করেছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘চুক্তি থাকা সত্ত্বেও আমরা ভারতের কাছ থেকে পদ্মাসহ অভিন্ন নদীগুলোর ন্যায্য পানি পাচ্ছি না। অথচ আমরা তাদের চাহিদা অনুসারে ট্রানজিট দিয়েছি, আমাদের দেশের বাজার দিয়েছি, তাদের নাগরিকদের এখানে অবাধে চাকরি করার সুযোগ দিয়েছি। দেশের জনমত উপেক্ষা করে উচ্চ মূল্যের বিদ্যুৎ কেনার জন্য আদানির প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছি। এসবের প্রতিবাদ করলে পুলিশ দিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। এটা তাহলে কোন সরকার? সরকার কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে?’

আসিফ নজরুল সাম্প্রতিক মার্কিন ভিসা নীতির বিষয় উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি দেশের মানুষকে লজ্জিত করেছে। তিনি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক অথবা জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে আহ্বান জানান।

গণসংহতি মঞ্চের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ফারাক্কা বাঁধের প্রতিবাদে লংমার্চ কেবল অতীতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নয়। এর ভূপ্রকৃতি, পরিবেশ, কৃষি, সংস্কৃতি তথা এ দেশের মানুষের সামগ্রিক জীবন ও রাজনীতির ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য রয়েছে। মাওলানা ভাসানী শুধু দেশ ও জনগণ–অন্তপ্রাণই ছিলেন না, তিনি চিন্তার দিক থেকেও কতটা অগ্রগামী ছিলেন এই লংমার্চ তার দৃষ্টান্ত। তিনি অভিযোগ করেন, দেশ আজ ভোটাধিকার, মানবাধিকারহীন দেশে পরিণত হয়েছে। সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘মাওলানা ভাসানীর মতো করে আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থকে উপলব্ধি করতে পারছি না। আমাদের দাবির কথা ভারতের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে পারছি না। অভিন্ন নদীর পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশ বিরোধী নানা  প্রচারণা চালানো হচ্ছে, ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো হচ্ছে। এসবের জোরালো প্রতিবাদ পর্যন্ত করা হচ্ছে না।’

আলোচকেরা বলেন, রাজনীতিবিদদের উচিত জাতীয় স্বার্থেই দিনটিকে জাতীয়ভাবে পালন করা। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। তারা মাওলানা ভাসানীর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দাবি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

আলোচনা সভায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও সম্প্রতি প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়।

আলোচনায় আরও অংশ নেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্যসচিব হাবিবুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল বিশ্বাস, জাতীয় পার্টি (জাফর) যুগ্ম মহাসচিব কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ।