দণ্ডাদেশ থেকে খালাস পেলেন বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, নির্বাচনে বাধা নেই

সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান ও তাঁর স্ত্রী সাবেরা আমান খালাস পেয়েছেন।

মামলায় আমানউল্লাহ আমানের ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও তাঁর স্ত্রীর ৩ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে থাকা আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ বুধবার এ রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেওয়া হয়।

রায়ের পর আমানউল্লাহ আমানের আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রথম আলোকে বলেন, আপিল বিভাগ আমানউল্লাহ আমান ও তাঁর স্ত্রীকে খালাস দিয়েছেন। সাজা বাতিল হওয়ায় আমানউল্লাহ আমানের নির্বাচনে অংশ নিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।

দণ্ডাদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আমানউল্লাহ আমানের করা আপিল ও তাঁর স্ত্রীর করা লিভ টু আপিলের ওপর গত ৪ মার্চ শুনানি শেষ হয়। সেদিন আপিল বিভাগ রায়ের জন্য ৩০ এপ্রিল দিন রাখেন।

আজ আদালতে আমানউল্লাহ আমানের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইনজীবী নাজমুল হুদা উপস্থিত ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় আপিলের ওপর পুনঃশুনানি শেষে ২০২৩ সালের ৩০ মে হাইকোর্ট আমানউল্লাহ আমানকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১৩ বছর এবং তাঁর স্ত্রী সাবেরা আমানকে দেওয়া ৩ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন।

হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালত গ্রহণের ১৫ দিনের মধ্যে আমানউল্লাহ আমান ও সাবেরা আমানকে সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
একই বছরের ৭ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণের পর আমানউল্লাহ আমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ-১ আদালত।

এর আগে সাবেরা আমান একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিন বছর কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে তিনি লিভ টু আপিল করেন, জামিন চান। ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর চেম্বার আদালত থেকে জামিন পান তিনি।

অন্যদিকে আত্মসমর্পণের পর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন আমানউল্লাহ আমান। ২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি আপিল বিভাগ আমানউল্লাহ আমানের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। এরপর তিনি নিয়মিত আপিল করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২০ জানুয়ারি আপিল বিভাগ আমানকে জামিন দেন।
দণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে আমানউল্লাহ আমানের করা আপিলের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর ২০২৩ সালে করা লিভ টু আপিল একসঙ্গে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করে আজ রায় দিলেন আপিল বিভাগ।

এর আগে সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আমানউল্লাহ আমান দম্পতির বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। একই বছরের ২১ জুন বিশেষ জজ আদালতের রায়ে আমানউল্লাহ আমানকে ১৩ বছরের এবং সাবেরাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা হাইকোর্টে আপিল করেন।

২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল মঞ্জুর করে তাঁদের খালাস দেন। এর বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে ২০১৪ সালের ২৬ মে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে হাইকোর্টে আপিল পুনঃশুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়। আপিল বিভাগের এ রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করেন আমানউল্লাহ আমান। পরে তা খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। পুনঃশুনানি শেষে বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে ২০২৩ সালের ৩০ মে হাইকোর্ট রায় দেন।