সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগ বাতিল: এটা ভুল সিদ্ধান্ত

মনজুর আহমদ

প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ জরুরি। মনস্তত্ত্ব যাঁরা বোঝেন, তাঁরা এটা স্বীকার করবেন। সারা বিশ্বেই প্রাথমিক শিক্ষায় এটি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

আমাদের দেশে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যায়নি, যথেষ্ট বিনিয়োগও করা হয়নি। ২০২০ সালে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল—সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে হয়তো তা সম্ভব হবে না, তাই কয়েকটি বিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছভিত্তিক (ক্লাস্টার) নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়। এতে শিক্ষকেরা গুচ্ছভুক্ত বিদ্যালয়গুলোতে ঘুরে ঘুরে নিয়মিত শিক্ষকদের সঙ্গে মিলিতভাবে শিশুদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চায় উৎসাহ দিতে পারবেন।

২০২০ সালের সিদ্ধান্ত অনুসারে দীর্ঘ সময় পর গত ২৮ আগস্ট ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’-এর প্রজ্ঞাপন জারি হয়। সেখানে অন্যান্য বিষয়বস্তুর পাশাপাশি সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছিল। এটি ছিল অত্যন্ত যুক্তিসংগত, প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

কিন্তু কিছু আপত্তি ওঠার পর সরকার দ্রুত সিদ্ধান্তটি বাতিল করল। এটি অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত এবং অসংগত। এটি মোটেই বলা যাবে না যে সারা দেশের সব সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছেন। শিশুরা খেলাধুলা করবে, গান শিখবে—আমার মনে হয় না সমাজের সাধারণ মানুষ তাতে আপত্তি করেন। কিছু মানুষ হয়তো আপত্তি করতে পারেন। তাতে সরকার এত বিচলিত হয়ে আগের সিদ্ধান্ত পাল্টে এটা বন্ধ করে দিল।

আমার মতে, এটি প্রাথমিক শিক্ষার জন্য, বিশেষ করে শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি ভুল সিদ্ধান্ত। আমি আশা করব, সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে।

মনজুর আহমদ: ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং সরকারের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন কমিটির সভাপতি

(মতামত লেখকের নিজস্ব)