অগ্নিনিরাপত্তা দেখতে কমিটি গঠন করে দিলেন হাইকোর্ট

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

রাজধানীর ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণে কী ব্যবস্থা রয়েছে, তা দেখতে কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চিহ্নিত করা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দৃশ্যমান স্থানে নোটিশ টানানোর জন্য ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষাপটে দুই আইনজীবীর করা পৃথক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন। শুনানিকালে আদালত বলেন, অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন আছে। আছে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ বিধিমালা। তবে আইন ও বিধিমালা থাকলেও অনেকে তা জানেন না। আবার জানলেও তা মানানোও যায় না, যা দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনক।

এদিকে বহুতলবিশিষ্ট ভবন, কারখানা ও স্থাপনায় গত বছর ও চলতি বছর সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কতজন নিহত হয়েছেন, জীবন–সম্পত্তির কেমন ক্ষয়ক্ষতি ও কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে—এসব তথ্য জানিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রেক্ষাপটে করা আরেকটি রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রুলসহ এ আদেশ দেন। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত তানজিনা নওরীনের এক আত্মীয় রোববার রিটটি করেন।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনার বিচারিক তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ রোববার একটি রিট করেন। ভবনটিতে আগুন লাগার কারণ উদঘাটন, সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও জরুরি বেরোনোর পথ ছিল কি না—এসব তদন্তে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে কমিটি গঠন ও প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে একই দিন অপর রিটটি করেন আইনজীবী ইশরাত জাহান। দুটি রিটের ওপর আজ প্রথমার্ধে একসঙ্গে শুনানি হয়। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ ও ইশরাত জাহান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।

পরে অমিত দাশ গুপ্ত জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুজন, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক, রাজউক চেয়ারম্যান ও বুয়েটের একজন করে প্রতিনিধি কমিটিতে থাকবেন বলে হাইকোর্টের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অগ্নি প্রতিরোধে স্থাপনাগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ও অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়—এসব বিষয়ে এই কমিটি গঠন করে দিয়েছেন আদালত। কমিটিকে চার মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ যেসব ভবনকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দৃশ্যমান স্থানে নোটিশ টানানোর জন্য ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

‘যখন কোনো ঘটনা ঘটে যায়, তখন আমরা সজাগ হই’

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে মধ্যাহ্ন বিরতির পর ব্লাস্ট, আসক ও বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে নিহত একজনের এক আত্মীয়ের করা অপর রিটের ওপর শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে আদালত রুল দিয়ে বহুতল ভবন, কারখানা ও স্থাপনায় গত বছর ও চলতি বছর ঘটা আগুনের ঘটনায় জীবন-সম্পত্তির ক্ষতি ও নেওয়া ব্যবস্থাসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। রুলে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

এর আগে শুনানিতে রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, জাতীয় বিল্ডিং কোড ও অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইনের বিধান মানা হচ্ছে না। নিস্ক্রিয়তা দেখা যায়। এখন সবাই জানতে পারছি যে ওই ভবনটিতে এক্সিট (বেরোনোর পথ) ছিল না। একপর্যায়ে আদালত বলেন, পত্রপত্রিকায়ও সেভাবে এসেছে—যখন কোনো ঘটনা ঘটে যায়, তখন আমরা সজাগ হই।

ফায়ার সার্ভিসের বার্ষিক প্রতিবেদন (২০২২–২৩) থেকে তুলে ধরে আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, এতে দেখা যায় প্রায় আড়াই হাজার মানুষ তাদের জীবন হারিয়েছে। মাত্র এক বছরে ২৯ হাজার ৫৭০টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে।

রিটের পক্ষে আইনজীবী অনীক আর হক শুনানিতে বলেন, অগ্নির্বাপণ আইন অনুসারে ছয়তলার ওপরে হলে বহুতলবিশিষ্ট ভবন। জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুসারে দশতলা হলে বহুতল ভবন। যদি কেউ ছয়তলার জন্য রাজউকের কাছ থেকে অনুমতি নেন, তিনি অগ্নিনির্বাপণ আইনে তখন আবেদন করেন না। বেইলি রোডের ওই ভবনটির বাণিজ্যিক ও আবাসিকের জন্য অনুমতি নেয়। তিনতলা পর্যন্ত থাকবে বাণিজ্যিক, এর ওপরে থাকবে আবাসিক। অথচ তা মানা হয়নি।

এ সময় আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান ও মোহাম্মদ নাজমুল করিম শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ ও আনিচ উল মাওয়া।