ফিরে দেখা ২০২৫
পঁচিশে পঁচিশ, যা নিয়ে আলোচনা হয় দেশজুড়ে
২০২৫ সালের আজ শেষ দিন, ৩১ ডিসেম্বর, বুধবার। মানুষের মধ্যে আজ আলোচনা বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গৌরবময় বিদায় নিয়ে। খালেদা জিয়া মঙ্গলবার ভোরে প্রয়াত হয়েছেন।
খালেদা জিয়াকে নিয়ে স্মৃতিচারণা ও আলোচনার মধ্যে একটু নজর বোলানো যাক ২০২৫ সালের দিকে। একটু পেছন ফিরে তাকালে আমরা দেখবে, বছরটি ছিল নানা ঘটনার। এর মধ্যে ২৫টি বড় ঘটনা পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো।
৭ জানুয়ারি: খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তিনিসহ সব আসামি খালাস পান। ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়া লন্ডনে যান চিকিৎসার জন্য। সেখানে ১৭ বছর পর কাছে পান তাঁর বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। খালেদা জিয়া দেশে ফেরেন ৬ মে।
৫ ফেব্রুয়ারি: ৩২ নম্বর ভাঙচুর
নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (পরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। এদিন রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙা শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। পরে বাড়িটি প্রায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া দেশের কমপক্ষে ১৪টি স্থানে বাড়ি, স্থাপনা ও ম্যুরালে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
১২ ফেব্রুয়ারি: জাতিসংঘ তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদন
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ১১৪ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে ওই সময়ের নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিগত সরকার ও শাসকদল আওয়ামী লীগকে সরাসরি দায়ী করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি হিসাবের পাশাপাশি অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়ে ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত (১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট, ২০২৪ পর্যন্ত) হয়ে থাকতে পারেন।
২৮ ফেব্রুয়ারি: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র-তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যাত্রা শুরু করে। দলটির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম মুখ নাহিদ ইসলাম। বছরের শেষ দিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী জোট করে এনসিপি। এ কারণে দলটির কয়েকজন নেতা পদত্যাগ করেন।
১৩ মার্চ: মাগুরার শিশুটির মৃত্যু
মাগুরার আট বছরের শিশু বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ৫ মার্চ। এ ঘটনায় দেশব্যাপী ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ৯ দিনের কষ্টযাত্রা শেষে শিশুটি ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ মামলার রায়ে শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। অভিযোগ গঠন বা বিচার শুরুর ২৫ দিনের মাথায় ১৭ মে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
১৬ মার্চ: বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা মামলা
২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি হলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। এ ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এদিন বিচারিক আদালতের দেওয়া সেই রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
২ এপ্রিল: ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের ১৫৭টি দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক (রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ) আরোপ করেন। এ ঘটনায় দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। বাংলাদেশি পণ্যের ওপরও নতুন করে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়। এতে পণ্য রপ্তানিতে শঙ্কার সৃষ্টি হয়। পরে ৮ জুলাই তা কিছুটা কমিয়ে করা হয় ৩৫ শতাংশ। আর ৩১ জুলাই চূড়ান্তভাবে ২০ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
১০ মে: আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে তিন দিন ধরে টানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে এদিন রাতে জরুরি বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
২২ মে: অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনা নিয়ে শোরগোল
অনির্ধারিত আলোচনায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেখান থেকে বেরিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’।
১৬ জুলাই: গোপালগঞ্জে গুলিতে নিহত ৫
গোপালগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা ঘিরে দিনভর দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালান। হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে মোট পাঁচজন নিহত হন। সেনা পাহারায় গোপালগঞ্জ ছাড়েন এনসিপি নেতারা।
২১ জুলাই: স্কুলে ভেঙে পড়ল বিমান
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি দোতলা ভবনে এফটি-৭ বিজিআই নামের একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমান ‘যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে’ উত্তরার ওই স্কুলভবনে আছড়ে পড়েছিল। ওই দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ ৩৬ জন নিহত হন।
৫ আগস্ট: জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে এর রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির অঙ্গীকার রেখে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এদিন বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
৯ সেপ্টেম্বর: ছাত্র সংসদ নির্বাচন
বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো। ২০১৯ সালের পর এ বছর ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট বিজয়ী হয়। এরপর একে একে জাকসু, চাকসু ও রাকসুতেও অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন এবং বেশির ভাগ পদে জয়ী হয় ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল।
১১ অক্টোবর: সেনা হেফাজতে ১৫ কর্মকর্তা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তিনটি মামলায় ২৫ জন (মোট ৩২) সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ২৫ কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন সেনাবাহিনীতে কর্মরত এবং একজন অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) ছিলেন। পরে সেনাবাহিনী ১৫ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার তথ্য জানায়। তাঁদের বিচার চলছে।
১৭ অক্টোবর: জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে তৈরি জুলাই জাতীয় সনদে সই করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট। পাশাপাশি সনদে সই করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। তবে এদিন জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অনুষ্ঠানে যায়নি, সনদে সইও করেনি। পরে তারা সই করেছে, এমন খবরও সামনে আসেনি।
১৮ অক্টোবর: বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে এদিন বেলা আড়াইটার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিটের সাত ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুনে নেভাতে গিয়ে আনসার বাহিনীর ২৫ সদস্যসহ মোট ৩৫ জন আহত হন। সে সময় পাঁচ দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তিনটি আগুনের ঘটনা ঘটে।
২৬ অক্টোবর: ‘বিয়ারিং প্যাড’ পড়ে তরুণের মৃত্যু
রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের ‘বিয়ারিং প্যাড’ খুলে পড়ে আবুল কালাম (৩৫) নামের এক যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞ ও কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ মেট্রোরেল অবকাঠামোর নকশায় ত্রুটি, আবার কেউ তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতির কথা বলেন। বিশেষ ধরনের রাবার ও ইস্পাতের তৈরি এই প্যাড সেপ্টেম্বরেও একবার খুলে পড়েছিল। তবে সেবার হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
১৭ নভেম্বর: শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। দেশে কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশের ঘটনা এটাই প্রথম। ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার আরেক আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। আর অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২১ নভেম্বর: ভূমিকম্প
ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে ঢাকা শহর। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলায়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। ভূমিকম্পে ১০ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ ছাড়া আহত হয় ছয় শতাধিক মানুষ।
১১ ডিসেম্বর: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তফসিলে ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও একই দিনে গণভোট আয়োজনের কথা বলা হয়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) রাজনৈতিকগুলো নির্বাচনের এ তফসিলকে স্বাগত জানায়।
১২ ডিসেম্বর: ওসমান হাদিকে গুলি, পরে মৃত্যু
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা হয়। ১৫ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাতে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়। ২০ ডিসেম্বর লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে শহীদ হাদিকে দাফন করা হয়। হত্যাকাণ্ডের মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
১৩ ডিসেম্বর: ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী নিহত হন। আহত হন আটজন। ড্রোন (মানুষবিহীন বিমান) দিয়ে ওই হামলা চালানো হয়। ২০ ডিসেম্বর শান্তিরক্ষীর মরদেহ দেশে আনা হয় এবং শোক ও শ্রদ্ধায় তাঁদের দাফন করা হয়।
১৮ ডিসেম্বর: প্রথম আলো-ডেইলি স্টার আক্রান্ত
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয় দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। একই সঙ্গে হামলার শিকার হয় শীর্ষ ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারও। সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে কার্যালয় দুটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। হামলার সময় ডেইলি স্টার–এর ২৮ জন সাংবাদিক ও কর্মী ছাদে আটকা পড়েন। এ হামলার ফলে প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরে প্রথমবারের মতো সংবাদপত্রের ছুটি বাদে এক দিনের জন্য প্রথম আলোর প্রকাশনা বন্ধ থাকে। প্রকাশনা বন্ধ ছিল ডেইলি স্টার–এরও। এদিন ছায়ানট ও পরে উদীচীর কার্যালয়েও হামলা হয়।
২৫ ডিসেম্বর: তারেক রহমানের দেশে ফেরা
তারেক রহমান কবে দেশে আসবেন—গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এটি ছিল অন্যতম আলোচিত বিষয়। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য সপরিবারের লন্ডন যান। ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন থেকে এদিন তিনি দেশে ফেরেন। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে রাজধানীর পূর্বাচলে গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। তাঁকে স্বাগত জানাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাখ লাখ মানুষ সেখানে জড়ো হন।
৩০ ডিসেম্বর: খালেদা জিয়ার গৌরবময় বিদায়
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এদিন মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁর স্বাস্থ্যের অনেকটা উন্নতি হয়েছিল, তবে নানা রোগে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। ৬ মে দেশে ফেরার পর তাঁকে কয়েক দফা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। ২৩ নভেম্বর তাঁকে মতো রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক মাসের কিছু বেশি সময় সেখানেই চিকিৎসাধীন থেকে খালেদা জিয়া চিরবিদায় নেন।
আজ ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা এলাকায় জানাজা শেষে খালেদা জিয়ার মরদেহ জিয়া উদ্যানে তাঁর স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হবে।