বায়রার সংবাদ সম্মেলন ঘিরে মারামারি, এরপর পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

বায়রার একাংশের ডাকা সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মারামারির ঘটনা ঘটেছেছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) একাংশের ডাকা সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে দুই পক্ষই পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে।

আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রিপোর্টার্স ইউনিটির অফিসকক্ষে এবং পরে দুপুর ১২টার দিকে রিপোর্টার্স ইউনিটির বাইরে এ মারামারি হয়।

আহত মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাগর-রুনি হলে হঠাৎ করে ৭০-৮০ জন লোক প্রবেশের চেষ্টা করে। সবাইকে প্রবেশ করতে না করি। কারণ, এত লোক তো জায়গা দেওয়ার সুযোগ নেই। একপর্যায়ে তারা আমাকে গালিগালাজ করে আমার ওপর হামলা করে। এতে নাক ফেটে যায়, চোখে প্রচণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হই।’

কেন হামলা করা হয়, জানতে চাইলে ফখরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘হামলাকারীরা ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলের সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা চান না সরকারের কাছে সিন্ডিকেট বন্ধের দাবি তুলে ধরি। সিন্ডিকেটধারী রুহুল আমিন স্বপন ও কাজী রফিকের নির্দেশে তাঁরা এসেছেন। এ হামলা করেন বায়রার সদস্য আতিক, ফাতেমা, নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া, হাসান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন।’

হামলায় আহত আল হাবীব ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম মনির বলেন, ‘আমার ওপর বেশ কয়েকজন হামলা করে। টেনেহিঁচড়ে সিঁড়িতে ফেলে দেয়, আমার গায়ের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলে।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর–রুনি হলে নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনটি হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফখরুল ইসলাম
ছবি: প্রথম আলো

দুই দফায় মারামারির পর বেলা তিনটার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর–রুনি হলে নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনটি হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফখরুল ইসলাম। সেখানে বলা হয়, ‘আমরা চাই, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য দ্রুত উন্মুক্ত হোক। অতীতের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। বর্তমান সরকার যদি পরাজিত শক্তির দোসরদের ইন্ধনে পুনরায় সিন্ডিকেট প্রথাকে অনুমোদন দেয়, তাহলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হবে এবং এর দায়ভার বর্তমান সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ওপরই বর্তাবে। বৈষম্যের শিকার সব রিক্রুটিং এজেন্সি, বিদেশগামী কর্মী, সর্বোপরি বৈষম্যবিরোধী দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিগত সরকারের আমলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অনিয়ম ও দুর্নীতির সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি সিন্ডিকেট না করে কম খরচে কর্মী পাঠানোর বিকল্প প্রস্তাবও দেওয়া হয়।

এ ছাড়া কিছু দাবি জানায় বায়রার এ অংশ। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরাসরি সিন্ডিকেটকে না বলতে হবে। দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটির সভায় সমঝোতার স্মারকের দুটি ধারা বাতিল বা সংশোধন করতে হবে; যাতে মালয়েশিয়ান সরকারের পরিবর্তে মালয়েশিয়ান নিয়োগকর্তা বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি পছন্দ করতে পারেন, কম খরচে কর্মী পাঠানো নিশ্চিত করা, সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

হামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বেলা সাড়ে তিনটার দিকে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন
ছবি: প্রথম আলো

অপর দিকে হামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শফিকুল কবির মিলনায়তনে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন। আল আকাবা অ্যাসোসিয়েটের স্বত্বাধিকারী আতিকুর রহমান আতিক বলেন, শ্রমবাজার নিয়ে ষড়যন্ত্র করার জন্যই সংবাদ সম্মেলন (ফখরুল ইসলাম অংশ) করছেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের দোসর। সিন্ডিকেটের ধোয়া তুলে এ শ্রমবাজারকে বন্ধ করতে চান।

সংবাদ সম্মেলনে সিন্ডিকেটের বিষয়ে ইনসট্যানস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের পরিচালক মেজবাহ উদ্দীন সাইদ বলেন, ‘কোনো সিন্ডিকেট ছিল না। আসলে সিন্ডিকেট বলে নাম দিয়ে একটি হাইপ তোলা হয়েছিল। আমরা চাই, দুই দেশের সরকারের আলোচনার মাধ্যমে মালয়েশিয়াতে যাতে লোক যেতে পারে।’