টাঙ্গাইলের বড় মনিরের জামিন স্থগিত, শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

ধর্ষণ মামলায় টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করা কিশোরীর জন্ম দেওয়া শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মনিরের জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ২১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ওই মামলায় গত ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পান গোলাম কিবরিয়া। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ এপ্রিল চেম্বার আদালত জামিন স্থগিত করে মনিরকে টাঙ্গাইলের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। গত ১৫ মে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জামিন না মঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠান। এরপর তিনি জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার রুল দিয়ে মনিরকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা বুধবার চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। মনিরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলাটি করে এক কিশোরী। গত ২৭ জুন হাসপাতালে এক ছেলেসন্তানের জন্ম দেয় ওই কিশোরী। চেম্বার আদালত মনিরের জামিন স্থগিত করে ওই শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ২১ আগস্ট নির্ধারণ করেছেন। শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন ২১ আগস্টের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। জামিন স্থগিত হওয়ায় মনির কারামুক্তি পাচ্ছেন না।

গোলাম কিবরিয়া টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই এবং জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব। এক কিশোরী বাদী হয়ে ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে এই মামলা করেন। গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও মামলায় আসামি করা হয়।

এজাহারে ওই কিশোরী উল্লেখ করেছে, গোলাম কিবরিয়া তাঁর আত্মীয় ও পূর্বপরিচিত। সম্প্রতি পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে ওই কিশোরীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের বিষয়টি গোলাম কিবরিয়াকে জানানোর পর তিনি সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

মামলায় ওই কিশোরী (১৭) অভিযোগ করে, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়া শহরের আদালত পাড়ায় নিজের বাড়ির পাশের একটি ভবনে ওই কিশোরীকে ডেকে নেন। সেখানে তার মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে গোলাম কিবরিয়া তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। পরে তাকে ধর্ষণ করে তার আপত্তিকর ছবি তুলে রাখা হয়। বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য গোলাম কিবরিয়া তাকে ভয়ভীতি দেখান। আপত্তিকর ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় বলে ওই কিশোরী মামলায় অভিযোগ করেছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, একপর্যায়ে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি গোলাম কিবরিয়া জানার পর গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তবে ওই কিশোরী রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত আটটার দিকে গোলাম কিবরিয়া ওই কিশোরীকে তুলে নিয়ে আদালত পাড়ার একটি বাড়িতে যান। সেখানে একটি কক্ষে ওই কিশোরীকে তালাবদ্ধ করে আবার ধর্ষণ করেন তিনি। এ ঘটনার পর গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাব ওই কিশোরীকে মারধর করেন। পরে দিবাগত রাত তিনটায় ওই কিশোরীকে বাড়িতে রেখে আসা হয়।