সিটি করপোরেশনের হিস্যা বুঝে নেওয়ার বিষয়ে জানাতে হবে হাইকোর্টকে

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

রাজধানীর বনানীতে নির্মিত একটি বহুতল ভবনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হিস্যাসহ বকেয়া সুবিধাদি বুঝে নেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে তিন মাসের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে হবে। একইসঙ্গে সেখানে সিটি করপোরেশনের হিস্যা ও সুবিধাদি নিয়ে ওঠা ‘ইস্যুগুলো’ দুই মাসের মধ্যে মীমাংসা করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সিটি করপোরেশনের জায়গায় ওই বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড।

একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন।

বনানীতে সিটি করপোরেশনের জায়গায় ১৪ তলা ভবন নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশন ও বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের মধ্যে চুক্তিতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে গতকাল রোববার ওই রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

‘সরকারি জমিতে পাঁচ তারকা হোটেল’ শিরোনামে ১ জুন প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এই প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বনানীতে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য উত্তর সিটি করপোরেশন ও বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের মধ্যে চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর ৪ জুন আবেদন দেন সৈয়দ সায়েদুল হক। দুদকে আবেদন করার পর দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না দেখে গতকাল রিটটি করেন তিনি।

আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক নিজেই শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী লিটন আহমেদ। দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ শুনানি করেন। বোরাকের পক্ষে আইনজীবী আলী শিকদার ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে আইনজীবী ইমতিয়াজ মঈনুল ইসলাম শুনানি করেন।

প্রথম আলোতে ১ জুন প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন আদালতে পড়ে শোনান আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক। তিনি বলেন, বনানীতে সিটি করপোরেশনের ৬০ কাঠা জায়গায় ২৮ তলা ভবন বানিয়ে বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড একাই ভোগদখল করছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, বোরাক রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে চুক্তি ছিল ১৪ তলা ভবন নির্মাণের। সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী তাদের ভাগের সম্পদের মূল্য প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা। কিন্তু সে হিস্যা গত এক দশকেও বুঝে পায়নি সিটি করপোরেশন। উল্টো চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ১৪ তলার স্থলে ২৮ তলা ভবন নির্মাণ করে পুরোটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে চুক্তি হয়। বনানীর মতো জায়গায় সিটি করপোরেশন ৩০ শতাংশ আর বোরাকের জন্য ৭০ শতাংশ রাখা হয়। এই চুক্তি অসম।

বনানী শেরাটন হোটেল ভবন
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

শুনানিতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, রিটে মানুষের স্বার্থ রক্ষায় বৃহৎ পরিসরে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের বাইরে গিয়ে তথা নিজস্ব এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করার আইনি ক্ষমতা দুদকের নেই।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ শুনানিতে বলেন, এ–সংক্রান্ত বিষয়ে ২০১৫ সালে দুদক অনুসন্ধান করে, যা নথিভুক্ত করে রাখা হয়েছে। একটি বিষয় নিয়ে একবার অনুসন্ধান হয়ে যাওয়ার পর আবার অনুসন্ধানের প্রয়োজন আছে কি না? ২০০৬ সালে চুক্তির পর এখন ২০২৩ সাল। এ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন ও বোরাক কর্তৃপক্ষ—তাদের মধ্যে সময়ে সময়ে যোগাযোগ হয়েছে। এতে প্রত্যেকে প্রত্যেকের নিজ নিজ স্বার্থ বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।

সিটি করপোরেশনের আইনজীবী ইমতিয়াজ মঈনুল ইসলাম বলেন, বোরাক ২০০৬ সাল থেকে নির্মাণকাজ শুরু করে। আদালত বলেন, সেখান থেকে এখন পর্যন্ত করপোরেশন কত টাকা আয় করেছে? তখন ইমতিয়াজ মঈনুল ইসলাম বলেন, ৪৫২ কোটি টাকার সম্পত্তি বুঝে নেওয়া বাকি আছে। এ জন্য গত ২ মার্চ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, অনুমোদন ছাড়া ভবন নির্মাণ করে কীভাবে? তখন বোরাকের আইনজীবী রমজান আলী শিকদার বলেন, ২৮ তলা করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নিয়েই। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব সম্পত্তি হওয়ায় রাজউকের কাছে যেতে হয় না। সিটি করপোরেশন নিজেই পরিকল্পনা অনুমোদন করে। শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেন।

সিটি করপোরেশন ও বোরাকের সঙ্গে চুক্তির পর ওঠা প্রশ্নগুলো মীমাংসা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং আইন অনুসারে স্পেস শেয়ারসহ সিটি করপোরেশনের বকেয়া সুবিধাদি আদায়ের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।