পুরোনোগুলোই বেহাল, হচ্ছে আরও ৫টি কর্তৃপক্ষ

কক্সবাজার, খুলনা, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে জনবল নেই, এমনকি চেয়ারম্যানও নিয়োগ হয়নি। তাদের কাজ চলছে খুঁড়িয়ে।

  • সিলেট, পায়রা, রংপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হচ্ছে।

  • সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, বাকি চারটি অনুমোদনের অপেক্ষায়।

  • জনবল ও অন্যান্য দপ্তরের অসহযোগিতায় পুরোনোগুলো কাজ করতে পারছে না।

বাংলাদেশ সরকারের লোগো

কক্সবাজারকে আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠার পর ছয় বছর পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা এখনো মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজই শুরু করতে পারেনি। কবে শুরু হবে, তা-ও অনিশ্চিত।

একই চিত্র গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। দুই বছর আগে পথচলা শুরু হলেও এখনো তাদের জনবলের প্রস্তাব পাস হয়নি। এমনকি চেয়ারম্যানও নিয়োগ হয়নি। খুঁড়িয়ে চলছে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম।

সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত এসব বেহাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে নতুন করে আরও পাঁচটি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করছে সরকার। গত ২২ সেপ্টেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়। প্রস্তাবিত পাঁচটি কর্তৃপক্ষ হচ্ছে সিলেট, পায়রা, রংপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

তাদের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রস্তাব গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। স্থানীয় হিসেবে তিনি কৌশলে সমন্বয় করে অন্যদের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছেন।
মোহাম্মদ নুরুল আবছার, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর

সাধারণত, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাজ হচ্ছে ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদন দেওয়া। এ ছাড়া মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা, যার আলোকে একটি এলাকার সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন মন্ত্রিসভায় পাস হয়েছে। গেজেট প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম শুরু হবে। এ ছাড়া বরিশাল, ময়মনসিংহ, রংপুর ও পায়রা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন এখন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) ছয়টি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। বাকি পাঁচটি হচ্ছে কক্সবাজার, খুলনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ইতিমধ্যে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করা হয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না। সরকার পছন্দমতো জনবল নিয়োগ দিচ্ছে। তাঁদেরকে বাড়ি, গাড়িসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু নাগরিকেরা সেবা পাচ্ছেন না।

উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করে মানুষের কোনো উপকার হয় না। বরং সরকারের ব্যয় বাড়ে। স্থানীয় সরকারের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বিরোধ দেখা দেয়। মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে করতে বিক্ষিপ্ত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে অবকাঠামো গড়ে ওঠে।
মোহাম্মদ ফজলে রেজা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি

পুরোনোগুলো বেহাল

গত ছয় বছরে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অর্জন হচ্ছে নিজেদের ভবন নির্মাণ, সড়কবাতি, তিনটি ঐতিহ্যবাহী দিঘি সংস্কার, চারটি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য নির্মাণ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কর্তৃপক্ষ উল্লেখযোগ্য কোনো কাজই করতে পারেনি। কারণ দুটি—প্রথমত, জনবল নিয়োগ হয়নি। দ্বিতীয়ত, সরকারের অন্যান্য দপ্তরের অসহযোগিতা।

জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা মনে করে, কর্তৃপক্ষ গঠনের কারণে তাদের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে। তাদের কাজ অন্যের হাতে চলে যাচ্ছে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার প্রথম আলোকে জানান, তাদের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রস্তাব গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। স্থানীয় হিসেবে তিনি কৌশলে সমন্বয় করে অন্যদের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছেন।

১৯৬১ সালে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালে কেডিএ আইন পাস হয়। চার বছর পেরিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত জনবল নিয়োগ হয়নি।

একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অনেকে ছাড়পত্র ছাড়া, আবার অনেকে অনুমোদিত নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ করছেন। এসব অনিয়ম নজরদারির মতো জনবল তাঁদের নেই।

খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী সাবিরুল আলম বলেন, মানুষকে সেবা দিতে তাঁরা জনবল চেয়েছেন। তবে এখনো পাননি।

২০২০ সালে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যাত্রা শুরু হয়। চেয়ারম্যান পদে মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি রুটিন কাজ করবেন। ১ হাজার ৪০০ জনবল নিয়োগের প্রস্তাব দিলেও তা অনুমোদন পায়নি। তাদের অনুমতি ছাড়াই নতুন নতুন ভবন গড়ে উঠছে।

কর্তৃপক্ষ গঠন কেন

কর্মকর্তারা বলছেন, একটি এলাকায় সুশৃঙ্খল আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান কাজ হচ্ছে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন, যার ওপর ভিত্তি করে সেখানকার আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা চিহ্নিত করা হবে। খেলার মাঠ, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোথায় হবে—তা মহাপরিকল্পনায় থাকবে।

তবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা প্রথম আলোকে বলেন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করে মানুষের কোনো উপকার হয় না। বরং সরকারের ব্যয় বাড়ে। স্থানীয় সরকারের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বিরোধ দেখা দেয়। মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে করতে বিক্ষিপ্ত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে অবকাঠামো গড়ে ওঠে।

ফজলে রেজা বলেন, ‘ভবন নির্মাণের ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদনের কাজটি স্থানীয় সরকার করবে নাকি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করবে—সরকারকে আগে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা মনে করি, কর্তৃপক্ষ না করে স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা বাড়িয়ে এই কাজটি করা।’