ঢাবি শিক্ষকদের বিভিন্ন ভাতা পুনর্বহালের দাবি জানালেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুবিধা বাতিল এবং হ্রাস করার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। এসব ভাতা ও সুবিধা পুনর্বহালের পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দাবি করেছে সংগঠনটি।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধাবিষয়ক সাত দফা দাবি জানিয়েছে সাদা দল। বিকেলে আহ্বায়ক মো. লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে সাদা দলের নেতা এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ইয়ারুল কবীর, আবদুস সালাম, শাহ মোহাম্মদ এমরানসহ ১২ জনের প্রতিনিধিদল উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষকদের গবেষণা ভাতা বাতিলের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদানই বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকের একমাত্র কাজ নয়, বহু বিদ্যমান জ্ঞানের বিকাশ এবং নতুন জ্ঞান সৃজনও তাঁদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোনো না কোনোভাবে গবেষণাকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। শিক্ষকদের গবেষণাকাজের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ গবেষণা ভাতা চালু করেছিল। শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে এর পরিমাণও বৃদ্ধি করা হয়। যদিও গবেষণাকাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় গবেষণা ভাতার পরিমাণ ছিল যৎসামান্যই। তারপরও হাঠাৎ এটি রহিত করা হলো। শুধু তা–ই নয়, ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসের বাইরে বসবাসকারী শিক্ষকদের জন্য যাতায়াত ভাতা রহিত করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ‘প্রভাষক হিসেবে যোগ দেওয়ার সময় একজন শিক্ষককে যে সর্বোচ্চ চারটি ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হতো, সেটিও হ্রাস করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকদের অবসর নেওয়ার ক্ষেত্রে যে সেশন বেনিফিট–সুবিধা ছিল, তা–ও বাতিল করা হয়েছে। বিদেশে সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত অনুদানও এখন বন্ধ রয়েছে। শতবর্ষ অতিক্রমকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য উচ্চতায় প্রতিস্থাপন এবং এর বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিং বৃদ্ধির জন্য যখন নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে, সেই সময়ে শিক্ষকদের জন্য পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করে বিদ্যমান সুযোগ–সুবিধা একের পর এক হ্রাস বা রহিত করা অযৌক্তিক এবং অন্যায্য বলে আমরা মনে করি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত কেবল শিক্ষকদের জন্য আর্থিক ক্ষতিই নয়, অসম্মানজনকও বটে। এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ও স্বায়ত্তশাসনের অবস্থানও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই আমরা এসব সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

সাদা দলের সাত দফা দাবি হলো অবিলম্বে গবেষণা ভাতা পুনর্বহাল, ক্যাম্পাসের বাইরে বসবাসকারী শিক্ষকদের যাতায়াত ভাতা পুনর্বহাল, প্রভাষক হিসেবে যোগ দেওয়ার সময় একজন শিক্ষককে সর্বোচ্চ চারটি ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার বিধি পুনর্বহাল, প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকদের জন্য টেলিফোন ভাতা পুনর্বহাল, শিক্ষকদের বিদেশে সেমিনারে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত অনুদান দেওয়া অব্যাহত রাখা, শিক্ষকদের বিদ্যমান কোনো সুযোগ-সুবিধা হ্রাস না করে ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধির ব্যবস্থা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বহুল প্রত্যাশিত ‘স্বতন্ত্র বেতন স্কেল’ প্রবর্তনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। স্মারকলিপিতে বলা হয়, এ দাবিগুলো দলমত–নির্বিশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকের দাবি। সাদা দলের আশা, দাবিগুলো বাস্তবায়নে উপাচার্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন।