মেলায় আসছেন পাঠকেরা

অমর একুশে বইমেলায় পছন্দের বই দেখছে পাঠকেরা। গতকাল বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেছবি: দীপু মালাকার

‘দরজা থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ান।’—কারওয়ান বাজার স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে ওঠামাত্রই বেজে উঠল ধারণকৃত এই নারীকণ্ঠ। আমাদের গন্তব্য বইমেলা। নামতে হবে তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে। তো কু ঝিক ঝিক শব্দে বইমেলায় আসতে সময় লাগল না মোটেই। তবে এর আগে ট্রেনের মধ্যেই শোনা গেল দুই তরুণ–তরুণীর গলা, ‘তোরে বলছিলাম না, সাই করে চলে আসব, দেখলি তো মিরপুর থেকে কত দ্রুত চলে এলাম, তুই তো আসতেই চাচ্ছিলি না!’

‘আমি আসতে চাচ্ছিলাম না! খুব ক্রেডিট নিচ্ছিস এখন, তাই না?’

ছেলেমেয়ে দুজনে কথাগুলো একটু জোরেই বলছিলেন। তাই আশপাশের দু–একজন যাত্রী তাকালেন তাঁদের দিকে। এটা দেখে মেয়েটি খানিকটা লজ্জাই পেলেন বোধ হয়। যথা স্টেশনে নেমে গেলেন তাঁরা। আমরা তাঁদের অনুসরণ করলাম। একসময় বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ঢুকে কথা হলো দুজনের সঙ্গে। ছেলেটির নাম নাবিল, মেয়েটি ফাইজা।

দুজনেই মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী। তাঁরা বললেন, ‘মেলা তো মাত্র শুরু হলো, এখনো যেন মেলাটা হানিমুন পিরিয়ড পার করছে, স্টলগুলোতে এ বছরের নতুন বইপুস্তক কেবল আসতে শুরু করেছে। আজ আমরা বিভিন্ন স্টল থেকে বইয়ের তালিকা সংগ্রহ করব। দু–চার দিন পর থেকে কেনা শুরু করব।’

নাবিল আর ফাইজার কথামতো বইমেলার কি এখন ‘হানিমুন পিরিয়ড’ চলছে? গতকাল মেলা ঘুরে মনে হলো, কথাটা তাঁরা একেবারে মন্দ বলেননি। দু–একটি স্টলে এখনো খুটখাট চলছে। জায়গায় জায়গায় পড়ে আছে নির্মাণসামগ্রী। এর মধ্যে অবশ্য বিকিকিনিও থেমে নেই। প্রথমা প্রকাশনে ঢুঁ দিতেই দেখা মিলল জুয়েল ও পিয়া দম্পতির সঙ্গে। ছোট দুই ছেলেমেয়ে রাদিফ ও আয়রাকে নিয়ে মেলায় এসেছেন তাঁরা।

তাঁদের হাতে বইয়ের ব্যাগ, ‘আজ শিশুপ্রহর ছিল, তাই বাচ্চাদের বই কেনার জন্যই এসেছি,’ পিয়া যখন এই কথা বলছিলেন, তখন কথার মধ্যে বাগড়া দিয়ে কেজি শ্রেণিতে পড়ুয়া রাদিফ বলল, ‘মা, চলো, ওই জীবজন্তুওয়ালা বইটা কিনে দাও।’ অগত্যা আবার শিশু চত্বরের দিকে পা বাড়ালেন পিয়া। এরই ফাঁকে প্রথমার বিক্রয়কর্মী ওয়ায়েজ আহমেদ জানালেন, আসিফ নজরুলের আমি আবু বকর আর আনিসুল হকের কখনো আমার মাকে—আমাদের এই নতুন দুটি উপন্যাস এবার ভালো চলছে। দুটি বইয়েরই দ্বিতীয় মুদ্রণ বাজারে এসেছে।

মেলায় ঘুরতে–ফিরতে দেখা হলো অনুপম প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মিলন নাথের সঙ্গে। বললেন, ‘আমরা হতাশ নই, বেচাবিক্রি এবার ভালোই হবে।’ তবে পুরোনো এই প্রকাশকের কণ্ঠে শোনা গেল কিছু হতাশার কথাও, ‘মেলার আজ তিন দিন পার হচ্ছে। কিন্তু যথেষ্ট শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই এখনো। বাংলা একাডেমি নিজেদের ব্যবস্থাপনায় কিছু শৌচাগার স্থাপন করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চ–সংলগ্ন যে ২০টি শৌচাগার রয়েছে, যেগুলোতে অনেক মানুষ একসঙ্গে যেতে পারতেন, আজও সেগুলো খোলা হয়নি। তাই মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে।’

২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার থেকে বিপুল মানুষ আসতে শুরু করেছেন মেলায়। এ সময় শৌচাগার নিয়ে ঝক্কিতে পড়তে দেখা গেছে অনেককেই। বিষয়টি স্বীকার করে বাংলা একাডেমির পরিচালক ও মেলা কমিটির সদস্যসচিব মুজাহিদুল ইসলাম বললেন, ‘মুক্তমঞ্চ–সংলগ্ন এই শৌচাগারগুলো আসলে শিল্পকলা একাডেমির আওতায়, এখানে গণপূর্ত বিভাগেরও কর্তৃত্ব রয়েছে।

ফলে সমন্বয় করতে কিছুটা সময় লাগছে। এখন শৌচাগারগুলোর সংস্কারকাজ চলছে। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এগুলো ব্যবহার করা যাবে।’

মাসব্যাপী এ মেলা সবে শুরু হয়েছে। মানুষ আসতে শুরু করেছে। ফলে আশা যখন উঁকি দিচ্ছে, হতাশাও কেটে যাবে নিশ্চয়! দিনে দিনে সব সমস্যা-সংকট মিটিয়ে ভরভরন্ত হয়ে উঠবে লেখক-পাঠকের এ মিলনভূমি।