দেশে বালা-মুসিবত হচ্ছে, মানুষ যেভাবে চায়, সেভাবে থাকতে পারছে না: ড. ইউনূস

আদালত প্রাঙ্গণে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঢাকা, ২ এপ্রিলছবি: ছবি: আসাদুজ্জামান

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘দেশে বালা–মুসিবত হচ্ছে। মানুষ যেভাবে বাঁচতে চায়, যেভাবে থাকতে চায়—সেভাবে থাকতে পারছে না। আইনের শাসন বলে যে জিনিস, সেটা আমরা কোথাও পাচ্ছি না। আপনারা (সাংবাদিক) রোজ সেটি লিখছেন। আপনাদের কাছ থেকেই তো আমরা শিখছি।’

মানি লন্ডারিং মামলায় অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার পর ঢাকার আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ মঙ্গলবার মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। একই সঙ্গে তিনি আগামী ২ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।

এর আগে আজ বেলা একটার দিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আদালতে হাজির হন।

বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নিজ নিজ দিকে তাকাই। আমরা নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে পারছি কি না। আমরা যেটা করতে চাচ্ছিলাম, সেটা করতে পারছি কি না? সেটা না করতে পারলে কীভাবে আমরা প্রতিবাদ জানাব? কীভাবে আমরা কথা শোনাতে পারি? শোনাবার পথ আমরা বের করি। পথ আমাদের বের করতেই হবে। এটা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

আমরা সবাই মিলেই তো এই দেশ বলে মন্তব্য করে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এখন রমজানের দিন। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন, বালা–মুসিবত থেকে আমরা যেন বাঁচতে পারি। আমাদের ওপর অনেক বালা–মুসিবত। ব্যক্তিগতভাবে আমার ওপর অনেক বালা–মুসিবত। আমার যাঁরা সহকর্মী, তাঁদের ওপর অনেক বালা-মুসিবত। দেশের ওপর বালা–মুসিবত। এর থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করুন।’

দেশের একমাত্র নোবেলজয়ী আরও বলেন, ‘সামনে ঈদ আসছে। আমরা যেন সত্যি সত্যি ঈদ উদ্‌যাপন করতে পারি। তারপর পয়লা বৈশাখ। সব খুশি একসঙ্গে আসছে। দেশে বালা–মুসিবত। এসব বালা–মুসিবত অতিক্রম করতে না পারলে আমাদের মুক্তি নেই, রেহাই নেই।’

সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা কতগুলো অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করি। কতগুলো স্বপ্ন নিয়ে কাজ করি। দেশের মানুষ এটাতে বিশ্বাস করেছে। দেশ-বিদেশের মানুষ এটাতে বিশ্বাস করেছে। এটাকে আমরা সামাজিক ব্যবসা বলছি। আমরা কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য নিয়ে হাজির হই না। মনে হয়েছে, এটা আনলে মানুষের মঙ্গল হবে। মানুষ মঙ্গলের জন্যই আমরা কাজ করি।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘মাঝেমধ্যে দুঃখ হয়, সারা দুনিয়া বাংলাদেশ থেকে শিখতে চায়। এটাতে আমাদের গৌরব বোধ করার কথা। কিন্তু তা না করে আমরা এমন কাজ করছি, যেন আমরা পাপের কাজ করে ফেলেছি। এমন অনুভূতি হওয়ার তো কোনো কারণ ছিল না। আমরা চাই, জাতি হিসেবে আমরা সারা দুনিয়ার সামনে গর্ব করতে পারি।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমরা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছি, সারা দুনিয়া যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে দুনিয়া সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে, বিনষ্ট হয়ে যাবে। সেটা থেকে উদ্ধারের একটা রাস্তা তৈরি করছি। সে জন্য সারা দুনিয়ার এত আগ্রহ। আমরা তিন শূন্যের পৃথিবী করার কথা বলে যাচ্ছি। এটাতেই মুক্তি। দুনিয়ায় পুঁজিবাদের কথা হয়েছে, কমিউনিজমের কথা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আমরা তো ও রকম কোনো মতবাদ প্রচার করছি না। আমরা বলছি, আপনি ইচ্ছা করলে এ কাজ করতে পারেন। এতে বালা–মুসিবত থেকে মুক্তি আসবে।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি নিজের বালা–মুসিবতের কথা বললাম। দেশের বালা–মুসিবতের কথা বললাম। পৃথিবীর বালা-মুসিবত আমাদের ঘিরে আছে। সেই বালা–মুসিবত থেকে আমাদের উদ্ধার করতে হবে।’