ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন

মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম

নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী (২ মার্চ ২০২৩) দেশে ভোটার ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। গত বছর ২ মার্চ ভোটার সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০।

অর্থাৎ এক বছরে ভোটার বেড়েছে ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩০ জন ও ভোটার বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ, যা মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্বাভাবিক হারের তুলনায় বেশি। ফলে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, ভোটার তালিকা সঠিক হয়েছে কি?

বিষয়টিকে জনমিতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

প্রথমত, ২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন, যা পরবর্তী সময়ে পিইসি (শুমারি–উত্তর যাচাই) শেষে দাঁড়ায় ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জনে। আর জাতিসংঘের বিশ্ব জনসংখ্যা সম্ভাবনা ২০২২ অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৯৬ জন।

এ ক্ষেত্রে ১৮ বছরের ওপরে জনসংখ্যা ১১ কোটি ৬৮ লাখ ৯১ হাজার ৫২৫ জন। আর জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন ও পিইসি (শুমারি–উত্তর যাচাই) উত্তর জনসংখ্যার হিসাব বিবেচনায় ২০ বছর ও তার ওপরের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি।

যেহেতু প্রাথমিক প্রতিবেদনে ১৮ ও ১৯ বছরের জনসংখ্যার একক বছরভিত্তিক তথ্য নেই, ফলে জাতিসংঘ সূত্রে ওই বয়সের প্রক্ষেপণ তথ্য (বিবিএস তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকায়) সমন্বিত করলে ১৮ বছরের ওপরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১১ কোটি ১০ লাখ ৪৯১ জন, যাঁরা মোটাদাগে ভোটার তালিকায় থাকার কথা। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য অনুযায়ী, মোট ভোটার ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। ফলে ৮১ লাখ ৫০ হাজার ৯৫০ জন ভোটার অতিরিক্ত যোগ হয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক ২০২০–এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে স্থূল জন্ম ও মৃত্যুহারকে বিবেচনায় নিলে লক্ষ করা যায় প্রতিবছর প্রায় ৩২ লাখ জন্মগ্রহণ ও ৮ লাখ ৫৭ হাজারের মতো মারা যায়। ফলে প্রতিবছর ২২ থেকে ২৩ লাখের বেশি মানুষ জনসংখ্যায় যুক্ত হচ্ছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক স্থানান্তর বা বিদেশে চাকরি করতে গেছেন ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন, যা ২০২১ সালে ছিল ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বশেষ জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ছিল ১ দশমিক ২২ শতাংশ। এসব বিবেচনায় নিলে ইসির হালনাগাদ ভোটার বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ প্রশ্নসাপেক্ষ বলেই প্রতীয়মান হয়।

দ্বিতীয়ত, সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী, এখন নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি। কিন্তু ইসির ভোটার তালিকায় তা প্রতীয়মান হয়নি, বরং ১৭ লাখ ৪০ হাজার ৮৪৫ জন পুরুষ ভোটার বেশি রয়েছে।

তৃতীয়ত, ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, হিজড়া জনসংখ্যা ১২ হাজার ৬২৯ জন আর নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছে মাত্র ৮৩৭ জন, যা মোট হিজড়ার তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশ কম।

শেষে বলা যায়, নির্ভুল ভোটার তালিকা সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম পূর্বশর্ত। দেশে ভোটার তালিকা নিয়ে অতীতে বিতর্ক দেখা গেছে। ফলে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ভোটার তালিকা নির্ভুল করা, যাতে কোনো প্রশ্ন বা সন্দেহ তৈরি না হয়।

  • মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়