পূজার ছুটির চার দিনে কক্সবাজার ভ্রমণে যাচ্ছেন ৬ লাখ পর্যটক
এবার দুর্গাপূজায় লম্বা ছুটি। টানা চার দিনে ছুটির অবসরে নাগরিকেরা বেড়াতে ছুটবেন দেশের নানা পর্যটনকেন্দ্রে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিড় হবে কক্সবাজারে। কক্সবাজারে সৈকতে ছুটির চার দিনে সমাগম ঘটবে ৬ লাখের বেশি পর্যটকের। এর মধ্যে ১৩ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের দিনই দুই লাখ মানুষের সমাগম আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে হোটেল–মোটেলের শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
হোটেলমালিকদের ধারণা, আগামীকাল বৃহস্পতি থেকে রোববার পর্যন্ত চার দিনে অন্তত ৬ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে। পর্যটকের সমাগম ঘিরে হোটেল-রেস্তোরাঁ, শুঁটকি, শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি রকমারি পণ্যসহ পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যবসা চাঙা হয়ে উঠেছে। শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল–মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস, কটেজগুলোতে দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার মানুষের।
পর্যটক টানতে গত ১৫-২০ দিন কক্ষভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ছাড়ের বিশেষ ঘোষণা দিয়েছিল হোটেলমালিক কর্তৃপক্ষ। পর্যটকের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই ছাড় প্রত্যাহার করা হয়েছে জানিয়ে কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং শহরজুড়ে জলাবদ্ধতার কারণে টানা দুই মাস হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর তেমন ব্যবসা হয়নি। পর্যটক টানতে তখন কক্ষভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ছাড় ঘোষণা করা হলেও সাড়া মেলেনি।
দুর্গাপূজার ছুটি উপলক্ষে মঙ্গলবার থেকে পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছেন জানিয়ে আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আজ বুধবারও অন্তত এক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার, পরশু শুক্রবার দুই দিন দেড় লাখ করে তিন লাখ, শনিবার এক লাখ এবং রোববার প্রতিমা বিসর্জনের দিন দুই লাখসহ পূজার ছুটির চার দিনে অন্তত ছয় লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগেই পাঁচ শতাধিক হোটেল গেস্টহাউস রিসোর্টের শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে যাবে। তবে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়ে কেউ যেন অতিরিক্ত কক্ষভাড়া ও রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের মূল্য বেশি আদায় করতে না পারে, তা তদারকি করা হবে।
সৈকতে ভিড়
আজ সকাল ১০টায় সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট ছিল পর্যটকের ভিড়ে ঠাসা। এই সৈকতে অন্তত ১০ হাজার পর্যটক এসেছেন বলেও সৈকতের কিটকটের (আরাম চেয়ার) ব্যবসায়ীরা জানান। কলাতলী ও লবণী পয়েন্টেও দেখা গেছে এমন ভিড়। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ডের কর্মীরা জানান, সকাল ৭টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে সমাগম ঘটে অন্তত ৫০ হাজার পর্যটকের। বিকেলে এর সংখ্যা আরও ২০-২৫ হাজার বাড়তে পারে। আগামীকাল বৃহস্পতি থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিন প্রতিদিন দেড় লাখ করে পর্যটকের সমাগম ঘটবে। রোববার দুই লাখ পর্যটক আসবেন।
সৈকত ভ্রমণ এবং সমুদ্রে গোসল সেরে পর্যটকেরা ছুটছেন দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দিকে। সড়কের পশ্চিম পাশে সমুদ্র আর পূর্ব পাশে পাহাড়সারি। মেরিন ড্রাইভ দিয়ে পর্যটকেরা পাহাড়-ঝরনা ও প্রাকৃতিক গুহার দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি, হিমছড়ি ঝরনা, ইনানী ও পাটোয়ারটেক পাথুরে সৈকত, টেকনাফ সৈকত, টেকনাফ মডেল থানার অভ্যন্তরের প্রেমকাহিনির মাথিন কূপ, কুদুমগুহা, নাফ নদী জালিয়ারদিয়া, মিয়ানমার সীমান্ত, ন্যাচার পার্ক, রামুর বৌদ্ধপল্লি, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির ও চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক দেখতে যাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মৌসুমে এবার পূজার ছুটিতে ছয় লাখ পর্যটক আসবেন। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সৈকতের প্রতিমা বিসর্জন উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পর্যটকদের হয়রানি-দুর্ভোগ লাঘব এবং খাবার ও হোটেলের কক্ষভাড়া অতিরিক্ত হারে আদায় হচ্ছে কি না, তা অনুসন্ধানে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে।