মুঠোফোন কোম্পানিগুলোকে আলাদা তথ্যভান্ডার তৈরিতে বিটিআরসির নির্দেশনা বাতিল প্রশ্নে রুল

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজ (তথ্য ভান্ডার) থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মুঠোফোন কোম্পানিগুলোকে আলাদা ডেটাবেজ তৈরি করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দেওয়া নির্দেশনা কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রুল দেন।

জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য যা নির্বাচন কমিশন বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে, নাগরিকদের ব্যক্তিগত সেসব তথ্য সংরক্ষণের কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, রুলে তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রীপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগসচিব, নির্বাচন কমিশন, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মোবাইল অপরারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে “বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা পাইয়ে দিতে ‘সরকারি চাপ’” শিরোনামে গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে চলতি মাসের শুরুতে রিটটি করা হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, বিটিআরসি মুঠোফোন কোম্পানিগুলোকে তাদের গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে তথ্যভান্ডার তৈরির নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনা অনুসারে মুঠোফোন কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের নাম–ঠিকানাসহ অন্যান্য যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবে। আগে মুঠোফোন কোম্পানিগুলো নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার থেকে তাদের গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ করত। নির্দেশনার বাস্তবায়ন হলে মুঠোফোন কোম্পানিগুলোকে ডিজিকন টেকনোলজিসের সঙ্গে ডেটাবেজের মাধ্যমে গ্রাহকদের তথ্য যাচাই করতে হবে। এ কারণে ডিজিকনকে গ্রাহকপ্রতি ১০ টাকা দিতে হবে। বর্তমানে মুঠোফোন কোম্পানিগুলো একই বিষয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনকে ৫ টাকা দেয়।

আদেশের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিটিআরসির ওই নির্দেশনা যদি মুঠোফোন কোম্পানিগুলো বাস্তবায়ন করে, তাহলে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যাবে। এতে করে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হবে। এ ছাড়া জনগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী। আইন অনুযায়ী বিটিআরসির সিদ্ধান্ত সংবিধানের ৪৩ (খ) অনুচ্ছেদবিরোধী এবং ২০১০ সালের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইনের ১৩ ধারাপরিপন্থী। বিটিআরসির সিদ্ধান্তের কারণে জনগণকে বাড়তি ৫ টাকা করে মুঠোফোন কোম্পানিগুলোকে দিতে হবে, যার পুরোটাই পাবে একটি বেসরকারি কোম্পানি ডিজিকন। ওই সিদ্ধান্তের কারণে সরকার কোনোভাবেই লাভবান হবে না বরং মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে ডিজিকন টেকনোলজিস লাভবান হবে। এসব যুক্তিতে রিটটি করা হলে আদালত ওই রুল দেন।