অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নানামুখী চাপে: টিআইবি

‘বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা: গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক টিআইবির আলোচনা সভা শেষে আয়োজকদের সঙ্গে পুরস্কারপ্রাপ্তরা
ছবি: প্রথম আলো

দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নানামুখী চাপ তৈরি করা হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমের মালিকপক্ষের স্বার্থ, করপোরেট সংস্কৃতি ও সাংবাদিকদের ব্যক্তিস্বার্থ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এমন চাপ বস্তুনিষ্ঠ সুসাংবাদিকতার জন্য বড় সুযোগ।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কার্যালয়ে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা: গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আলোচকেরা এসব মতামত তুলে ধরেন।

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে টিআইবি। একই সঙ্গে ২০২১ সালে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বীকৃতি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের সোচ্চার হওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু এখন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নানা ধরনের চাপ দেখা যাচ্ছে। বাক্‌স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে নানামুখী প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার সাহস দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন বৈশাখী টেলিভিশনের প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট জুলফিকার আলী। তিনি বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার ক্ষেত্রে বাইরের চাপ যেমন আছে, তেমনি প্রতিষ্ঠানের ভেতরের ও সাংবাদিকদের লোভ-লালসারও দায় আছে।

ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ বলেন, বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার প্রসার দেখা যাচ্ছে। চাপ থাকলেও এমন পরিস্থিতি গণমাধ্যমের জন্য কাজের বড় সুযোগ।

গণমাধ্যমগুলো প্রতিনিয়ত দুর্বল হচ্ছে বলে মনে করেন একাত্তর টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর সুজন কবির। তিনি বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার যে চাপ, মালিকপক্ষ তা নিতে চায় না।

প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা না পেলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের (জিআইজিএন) রোভিং এশিয়া এডিটর মিরাজ আহমেদ চৌধুরী।

চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন বলেন, বহুমাত্রিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করা হলেও যাঁরা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আছেন, তাঁদের ওপর প্রতিবেদনের প্রভাব পড়ছে না।

সভায় আরও বক্তব্য দেন টিআইবির পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম হেল্প ডেস্কের প্রধান বদরুদ্দোজা বাবু।

সভায় ‘বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিক: গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর জাফর সাদিক।

২০২১ সালের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন সিলেট ভয়েস ডটকমের প্রতিবেদক শরীফ উদ্দিন, খুলনার দৈনিক পূর্বাঞ্চলের নিজস্ব প্রতিবেদক এইচ এম আলাউদ্দিন, প্রথম আলোর সাবেক নিজস্ব প্রতিবেদক আহমেদ জায়িফ, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মুকিমুল আহসান, মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘উন্মোচন’। জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি পারভেজ নাদির রেজা এবং রাইজিং বিডি ডটকমের প্রতিবেদক রফিকুল ইসলাম। চ্যানেল টোয়েন্টিফোর ও একাত্তর টেলিভিশনের দুজন ক্যামেরাপারসনও পুরস্কার পান।