আবরার হত্যার রায়: যা বলছেন বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

আবরার হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। বুয়েট, ঢাকা
ছবি: আশরাফুল

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আদালতের দেওয়া রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন বুয়েটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। রায় ঘোষণার পর বুধবার দুপুরে বুয়েটের উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আলাদা করে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। তাঁরা আশা প্রকাশ করেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যেই কার্যকর হবে এই রায়।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আজ বুধবার দুপুরে আবরার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।  

এরপর বেলা দেড়টার দিকে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে রায় নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান বুয়েটের উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার। আর বেলা ২টা ১০ মিনিটের দিকে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে সাংবাদিকদের কাছে রায়ের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

বুয়েটের উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেন, ‘রায়ে শাস্তি যা হয়েছে, তা যথেষ্ট। বিচার বিভাগ তাঁদের প্রজ্ঞা ও আইন অনুযায়ী যথেষ্ট সঠিকভাবে বিচার করেছেন বলে আমরা মনে করি। এর ওপর আমাদের আস্থা রাখা উচিত। আমরা আশা করি, রায়টি যেন স্বল্প সময়ের মধ্যে কার্যকর হয়। ভবিষ্যতে আমাদের শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে যে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি ভোগ করতে হবে।’

আবরারের পরিবারের প্রতি সব সময় সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন বুয়েট উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘আবরারের পরিবারের প্রতি আমরা সব সময়ই সহমর্মিতা দেখিয়েছি। বুয়েটের পক্ষ থেকে যত দূর সম্ভব আইনি ও আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতাও করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও করা হবে। আইনি সহায়তা, আনুষঙ্গিক খরচ প্রভৃতি সবকিছুই আমরা বুয়েট থেকে বহন করছি। এ বাবদ এখন পর্যন্ত ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক সংকটে পড়ায় আবরারের পরিবারকে গত ১ জুলাই থেকে প্রতি মাসে ৭৫ হাজার টাকা করে আমরা দিচ্ছি। নৈতিক দায়িত্বের জায়গা থেকে আমরা এই সহযোগিতা করে যাব।’

যেসব ছাত্রের শাস্তি হলো, তাঁদের বিপথে যাওয়ার দায় বুয়েট কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের দায় আছে কি না, সেটি বিচার বিভাগই দেখবেন। এখানে আমাদের পক্ষ থেকে বলার কিছু নেই। আমাদের সিস্টেমে কোনো ফল্ট আছে কি না, সেটি আমরা ভেবে দেখছি। সে জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে।’

পরে বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত প্রতিক্রিয়া সাংবাদিকদের সামনে পড়ে শোনানো হয়। সেখানে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, আবরার হত্যার রায়ে সবার আস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা এই রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি এবং আবরারের পরিবারের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আশাবাদ ব্যক্ত করছি যে এ রায় শেষ পর্যন্ত বহাল থাকবে ও বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে আমাদের প্রত্যাশা, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক কাউকেই যেন রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির বলি হতে না হয় এবং সব ক্ষেত্রে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে।

লিখিত প্রতিক্রিয়ায় আবরার হত্যার পলাতক তিন আসামিকেও দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

দুই বছর আগে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তা আমলে নিয়ে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। আসামিদের মধ্যে ২২ জনকে আজ আদালতে আনা হয়। পলাতক তিনজন। আসামিরা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা-কর্মী।