আসামি ধরতে গ্রামে গ্রামে জুতা বিক্রিও করেছি

সাধারণ একজন মাছ ব্যবসায়ীর হত্যারহস্য বের করতে রাজধানীতে যাত্রী পরিবহনকারী বাহন লেগুনায় চালকের সহকারী হিসেবে দুদিন কাজ করেছেন যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিলাল আল আজাদ। লাল পাদানিযুক্ত লেগুনা খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করেছেন চার খুনিকে। দেশে আলোচিত না হলে অনেক ক্ষেত্রে খুনের রহস্য উদ্ঘাটিত হয় না—এমন অভিযোগের মধ্যে এই এসআইয়ের চেষ্টা প্রশংসা পেয়েছে। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমদুল হাসান

বিলাল আল আজাদ

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনি তো ব্যাপক পরিচিতি পেলেন। কেমন লাগছে?

বিলাল: এত সাড়া পাব, কখনোই ভাবিনি। তবে প্রচার পাব ভেবে এই কাজ আমি করিনি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এটা আপনার দায়িত্ব ছিল, তা ঠিক। কিন্তু এত চেষ্টা তো দেখা যায় না।

বিলাল: যখন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নিই, তখন আমি মনে করি ভুক্তভোগী ব্যক্তিটি আমারই স্বজন। যত কষ্টই হোক, চেষ্টা থাকে হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা। খুনিদের গ্রেপ্তারের পর ভুক্তভোগীর স্বজনেরা হাউমাউ করে কাঁদেন, আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, তখন কী দারুণ অনুভূতি হয়, তা বলে বোঝানো যাবে না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: চালকের সহকারী সাজার চিন্তাটি কোথা থেকে এল?

বিলাল: মাছ ব্যবসায়ীকে (মহির উদ্দিন) হত্যার ঘটনায় কোনো সূত্র ছিল না। সিসিটিভি ক্যামেরায় একটি দৃশ্য পাওয়া যায় যে এক ভুক্তভোগীকে লেগুনা থেকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সেই লেগুনা শনাক্তের উপায় খুঁজতে গিয়েই হেলপার (চালকের সহকারী) হওয়ার ভাবনা আসে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: লেগুনার চালকেরা আপনাকে সন্দেহ করেনি?

বিলাল: তা তো করেছেই। প্রথমে কাজেই নিতে চায়নি। পরে লেগুনা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তির মাধ্যমে কাজটি নিই। তারা ভেবেছে আমি কাজ শিখছি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: দুদিন চালকের সহকারীর কাজ করে আপনার ৭০০ টাকা আয় হয়েছিল। টাকাটা কী করেছেন?

বিলাল: রাস্তায়ই খরচ হয়ে গেছে। খাওয়াদাওয়া, টুকটাক অন্যান্য খরচ।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তদন্তের চার দিনে কখনো কি মনে হয়েছে, খুনিকে ধরা সম্ভব হবে না?

বিলাল: না, সেটা মনে হয়নি। বড় কাজ ছিল লেগুনাটিকে শনাক্ত করা। সেটা দুদিনেই সম্ভব হয়। অবশ্য এটা মনে হয়েছিল যে সময় লাগবে। লেগুনা শনাক্তের পর মাদারীপুরে গিয়ে চালককে পেয়ে যাই। চালক জানান, তিনি আরেকজনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন ঘটনার দিন যে ব্যক্তি লেগুনা চালিয়েছিলেন, তাঁকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। পুলিশে যোগ দিয়েছেন কি নিজের পছন্দে?

বিলাল: মা, বাবা ও স্বজনদের অনুপ্রেরণাও ছিল। এই হত্যারহস্য উদ্‌ঘাটনের পর মিডিয়ায় (গণমাধ্যমে) আমার ছবি দেখে পরিবারের সদস্যরাও উচ্ছ্বসিত। তবে মা-বাবা সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বলেছেন। এই ঘটনার পর স্যাররা (পুলিশের কর্মকর্তারা) উৎসাহ দিয়েছেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এর আগে কখনো এ ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন?

বিলাল: নিয়েছি। ছয় বছর আগে একটি হত্যারহস্য উদ্‌ঘাটনে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় টানা সাত দিন বাড়ি বাড়ি ফেরি করে পুরোনো জুতা বিক্রি করেছি। জুতা বিক্রিতে ১ হাজার ৪০০ টাকা মুনাফাও হয়েছিল। একপর্যায়ে আসামির নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়। পরে গভীর রাতে মুন্সিগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হই।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এমন কোনো মামলা আছে, চেষ্টা করেও যার রহস্য বের করতে পারেননি?

বিলাল: পৃথিবীর কোনো দেশেই শতভাগ মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয় না। একটি মামলা আছে, অনেক চেষ্টা করেছি, রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারিনি। ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ) ও পিবিআইয়ের (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্তেও অপরাধীকে শনাক্ত করা যায়নি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কোন মামলা?

বিলাল: সেটা প্রকাশ করতে পারছি না। তবে ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনার হাতে এখন কয়টা মামলা আছে, যা তদন্ত করছেন?

বিলাল: ১০টি মামলা। মামলাগুলো অপহরণ, মাদক, হত্যা, দস্যুতা ও মারামারির ঘটনায়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনি কি মনে করেন, একজন সাধারণ মানুষের হত্যারহস্য উন্মোচনে আপনার এই নিষ্ঠা অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে?

বিলাল: কেউ যদি অনুপ্রাণিত হন, সেটাই হবে আমার আসল সফলতা। তবে পুলিশে এমন অনুপ্রেরণামূলক ঘটনা আরও অনেক আছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ভবিষ্যৎ ভাবনা কী

বিলাল: দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে যেতে চাই।