আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, কক্ষে তালা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসিফ নজরুলের দেওয়া একটি স্ট্যাটাসকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। তাঁকে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়ে আজ বুধবার বিকেলে ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। এ কর্মসূচিতে প্রায় ৩০ জন অংশ নেন। তাঁরা আসিফ নজরুলের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
আর আজ সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছে ছাত্রলীগ। এর আগে দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ১৭ আগস্টে দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলার বার্ষিকীকে ঘিরে আয়োজিত সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের একটি অংশ আইন বিভাগে যান। সেখানে আসিফ নজরুলের কার্যালয়ে (তখন বন্ধ ছিল) গিয়ে তাঁরা কয়েকটি তালা লাগিয়ে দেন। এ ছাড়া কার্যালয়ের বাইরে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা কয়েকটি পোস্টার ঝুলিয়ে দেন। হাতে লেখা এসব পোস্টারে আসিফ নজরুলকে ‘দেশদ্রোহী’, ‘তালেবানের দালাল’ ও ‘জঙ্গিবাদের মদদদাতা’ বলে অভিযুক্ত করা হয়৷
অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কার্যালয়ে তালা লাগানোর ঘটনায় নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আসিফ নজরুলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁর কক্ষে তালা দিয়েছেন৷
তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া স্ট্যাটাসে অধ্যাপক আসিফ নজরুল লেখেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমানবন্দর ধরনের দৃশ্য বাংলাদেশেও হতে পারে।’
আমার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো মহল থেকে যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হচ্ছে, আমি তাতে বিস্মিত ও মর্মাহত।
এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মো. নাহিদ হাসান আজ সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে বলেছেন, আসিফ নজরুলের স্ট্যাটাসটি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি, সুনাম ও দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যাপক আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগটি জিডি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের মতামত নিয়ে অভিযোগটির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্ট্যাটাস নিয়ে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ক্ষোভের বিষয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো মহল থেকে যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হচ্ছে, আমি তাতে বিস্মিত ও মর্মাহত। আমার স্ট্যাটাসে কাউকে উল্লেখ করে কিছু বলা হয়নি। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে বিজয়ী সরকার দৃঢ়ভাবে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে বলে এ ধরনের মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়।
এমন একটা কথা সম্ভাবনা হিসেবে আমার স্ট্যাটাসে বলা হয়েছে। আমি মনে করি, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার সঙ্গে উগ্রবাদ বা মৌলবাদকে উৎসাহিত করার কোনো সম্পর্ক নেই। আশা করি, আমার বক্তব্য নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসিফ নজরুলের কক্ষে তালা দেওয়ার বিষয়টি আমরা অবহিত হয়েছি৷ সেখানে কী ঘটেছে, কেন ঘটেছে, একজন সহকারী প্রক্টরকে তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে৷’