আয় ও সম্পদ বেড়েছে

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন। তিনি এবারও কাউন্সিলর পদপ্রার্থী। পাঁচ বছর আগে স্কুলব্যাগের দোকানের ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তাঁর নিজের বা স্ত্রীর কোনো স্থাবর সম্পদ ছিল না। টিভি, ফ্রিজ, ল্যাপটপ ও আসবাবপত্রের বাইরে তাঁর ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আর স্ত্রীর নামে ১০ ভরি সোনা।

পাঁচ বছরের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ হোসেনের বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৮৮৮ টাকা। ঘর ভাড়া ও কাউন্সিলরের সম্মানী হিসেবে এ টাকা পান তিনি। এখন অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তাঁর হাতে নগদ আছে ১০ লাখ ৯৭ হাজার ১২৪ টাকা। স্ত্রীর হাতে নগদ আছে ৩ লাখ টাকা। নিজের ১০ তোলা ও স্ত্রীর ২০ তোলা সোনা আছে। নিজের গাড়ি না থাকলেও স্ত্রীর নামে আছে একটি প্রাইভেট কার। নিজের ও স্ত্রীর নামে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী আর স্ত্রীর ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার আসবাবপত্র আছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে পৈতৃকসূত্রে পাওয়া অকৃষিজমি ও বাণিজ্যিক দালান। তাঁর কোনো দায়দেনা নেই।

পাঁচ বছরের ব্যবধানে মোহাম্মদ হোসেনের মতো ডিএসসিসির বর্তমান কাউন্সিলরদের বেশির ভাগের বার্ষিক আয় ও সম্পদ বেড়েছে। অবশ্য কারও কারও আয় ও সম্পদ কমেছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনের আগে এবং এবারের নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দেওয়া হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। ২৩ জন বর্তমান কাউন্সিলর ও প্রার্থীর হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৭ জনের আয় ও সম্পদ বেড়েছে। আয় কমেছে ৬ জনের।

৪২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর মো. সেলিমের বার্ষিক আয় ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৯১০ টাকা। এর মধ্যে ১৮ লাখ ১০ হাজার ৯১০ টাকা আসে ঘরভাড়া থেকে। ব্যবসা ও ঘরভাড়া থেকে তাঁর স্ত্রীর বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর বার্ষিক আয়ের কোনো হেরফের হয়নি। তবে ১৯ লাখ ৮২ হাজার ৬৬২ টাকার অস্থাবর সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৪৩ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩৭ টাকা। এর মধ্যে প্রার্থীর হাতে নগদ আছে ২১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। সূত্রাপুরে তাঁর একটি অ্যাপার্টমেন্ট ও একটি দালান এবং স্ত্রীর নামে একটি দালান আছে। এগুলো আগেও ছিল। পাঁচ বছর আগে তাঁর ৬৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার দেনা ছিল। এখন সেসব দেনা নেই।

৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর মো. গোলাম হোসেনের নামে ৩০টি মামলা আছে। হলফনামা অনুযায়ী, তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর সোনা আছে ৩৫ ভরি। সব মামলায় তিনি জামিনে আছেন। পাঁচ বছরে গোলাম হোসেনের মামলা বেড়েছে ২০টি। গতবার তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ছিল ১০টি। স্বামী-স্ত্রীর আয় বেড়েছে ২ লাখ টাকা। তবে সোনা ১২ ভরি কমে গেছে। তবে নগদ টাকা ১৩ লাখ থেকে এখন আড়াই কোটি হয়েছে। গোলাম হোসেনের বার্ষিক আয় ৭ লাখ টাকা, আর স্ত্রীর আয় ৪ লাখ টাকা। স্ত্রী এবং তাঁর মিলে নগদ টাকা আছে ২ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একটি ছয়তলা বাড়িসহ কৃষি-অকৃষিজমি আছে। ব্যাংকঋণ আছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

একইভাবে ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মো. হাসান, ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. নাসিম মিয়া, ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ নূর হোসেন, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের ময়নুল হক, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সারোয়ার হাসান, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রঞ্জন বিশ্বাসের আয় ও সম্পদ বেড়েছে। ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রার্থী মো. নূরে আলম, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাসুদ, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শহীদ উল্লাহ, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হামিদুল হক, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের নাসির আহাম্মদ ভূঁইয়া ও ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল কাদিরের আয় বেড়েছে।

শত ভরি সোনার মালিক
৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মীর সমীর ও তাঁর স্ত্রীর ১৩৫ ভরি সোনা আছে। এর মধ্যে নিজের ১০ ভরি, স্ত্রীর ৫০ ভরি, আর নির্ভরশীলদের ৭৫ ভরি। তবে সোনাদানার তুলনায় মীর সমীর ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় কম। ব্যবসায় ও বাড়িভাড়া থেকে তিনি আয় করেন সাড়ে তিন লাখ টাকা। নির্ভরশীলদের আয় ১৫ লাখ টাকা। সমীর ও তাঁর স্ত্রীর নামে ১৭ কাঠা জমি ও একটি পাকা দালান আছে বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেন। পাঁচ বছর পর তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে ১ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে সমীর, তাঁর স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের হাতে নগদ টাকা ছিল ১৩ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ছিল ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা, এবারও ঠিক সেই টাকাই আছে ব্যাংকে।

কমেছে যাঁদের
ডিএসসিসি ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ রতন ও তাঁর স্ত্রী জহুরা আহমেদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। ২০১৫ সালের হলফনামা অনুযায়ী, ব্যবসা থেকে রতনের বার্ষিক আয় ছিল ৪ কোটি ২৩ লাখ ৬২ হাজার ৫৬৬ টাকা। আর তাঁর স্ত্রী জহুরা আহমেদের আয় ছিল ১ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর এই প্রার্থীর বার্ষিক আয় কমে হয়েছে মাত্র ৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। আর তাঁর স্ত্রীর আয় কমে হয়েছে ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পত্তি, ঋণ ও নগদ টাকা আগেও যা ছিল, এখনো ঠিক তা–ই আছে। এক টাকাও কম-বেশি হয়নি।

গত পাঁচ বছরে ২১টি মামলা বেড়েছে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী বিএনপির মকবুল ইসলাম টিপুর। হলফনামা অনুযায়ী, ২০১৫ সালে তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলার উল্লেখ ছিল। মামলা বাড়লেও তাঁর বার্ষিক আয় কমেছে। ২০১৫ সালে বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৯ লাখ টাকা। এখন ৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। গতবারের চেয়ে এবার তাঁর ব্যাংকঋণও বেড়েছে। তখন ব্যাংকঋণ ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ। এবার ২৪ লাখ বেড়ে ১ কোটি সাড়ে ৪৩ লাখ টাকা হয়েছে।

১০ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মারুফ হোসেন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মুন্সী কামরুজ্জামানের আয় ও সম্পদ কমেছে। আয় কমেছে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মাকছুদ হোসেনের।