ইন্দিরা রোডে হঠাৎ বিস্ফোরণ

রাজধানীর ইন্দিরা রোডের সড়কে বিস্ফোরণে পাঁচটি ম্যানহোলের স্ল্যাব উড়ে যায়
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ইন্দিরা রোডের সড়কে বিস্ফোরণে পাঁচটি ম্যানহোল ও স্ল্যাব উড়ে গেছে। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খামারবাড়ি দিকে যেতে ইন্দিরা রোডের শেষ মাথায় বিকট আওয়াজ তুলে কয়েকটি বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়। এ সময় ওই সড়কের পাঁচটি ম্যানহোল ও স্ল্যাব উড়ে যায়। সড়কটিতে ছোট বড় কয়েকটি গর্ত তৈরি হয়। কোথাও কোথাও ফাটলও দেখা যায়। ঘটনার পর পরই ওই এলাকায় ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আসে। ফায়ার সার্ভিসের দলটি এসে ওই সড়কের নিচের গ্যাস ও ময়লা পরিষ্কার করে চলে যায়।

ওই সড়কের একটি বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী মো. নাজমুল খান। বিস্ফোরণের সময় তিনি সড়কেই ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাস্তায় তখন মানুষ ছিলই না। কেবল একটা প্রাইভেট কার ছিল। একেকটার পর একটা ম্যানহোলে বিকট আওয়াজে বিস্ফোরণ হচ্ছিল। মোটা পাঁচটি। প্রাইভেট কারটি তখন থেমে যায়। বিস্ফোরণের পর আমি জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করি। এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের লোকেরা আসেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. শরীফ হোসেন ঘটনার পর পরই ওই সড়কে এসে দাঁড়ান। তিনি প্রথম আলোকে জানান, ‘দুপুরের দিকে হঠাৎ করে বিকট আওয়াজে শব্দ হয়। এসে দেখি ম্যানহোলগুলো উল্টে আছে, স্ল্যাবগুলো উপড়ে গেছে। আর চারপাশে গ্যাসের গন্ধ। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। বারবার তিতাসকে জানানোর পরও কোনো সমাধান মেলেনি।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ সালের মার্চ মাসের দিকে পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় একই ধরনের গ্যাসের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ইন্দিরা রোডের এই অংশেও তাঁরা গ্যাসের গন্ধ পেয়েছেন। গ্যাসের এই সমস্যার কথা ঢাকা ওয়াসা ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিসট্রিবিউশন কোম্পানিকে বেশ কয়েকবার জানিয়েও কোনো সমাধান তাঁরা পাননি।

ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস, তিতাস ও সিটি করপোরেশনের লোকেরা কাজ করছেন
ছবি: সংগৃহীত

বিকেলে সেখানে বাতাসে গ্যাসের গন্ধ এসে নাকে লাগে। ওই রাস্তায় ম্যানহোলগুলোতে তখন কাজ করছিলেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিসট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষের ভাড়াটে শ্রমিকেরা। তখনো একটি ম্যানহোল থেকে গ্যাস বের হচ্ছিল।

এলাকাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ইন্দিরা রোডসহ তাঁর ওয়ার্ডের কয়েকটি স্পটে প্রায়ই এমন গ্যাসের লাইন ফুটো হয়ে গ্যাস বের হয়। প্রায়ই গন্ধ ছড়ায়। এলাকাবাসী এ নিয়ে অভিযোগও করেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াসা ও তিতাসকে এটি ঠিক করতে বারবার চিঠি দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে আমরা একটি চিঠি দিয়েছি। আজকের ঘটনার সময় ওই রাস্তায় লোকজন কম ছিল। অবস্থা এমন যেকোনো সময় বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

বিস্ফোরণের পর সড়কে ছোট ছোট গর্ত তৈরি হয়ে যান চলাচলে বিঘ্ন তৈরি হয়
ছবি: সংগৃহীত

ঘটনার পর থেকে তিতাস গ্যাসের ৮ জন ভাড়াটে শ্রমিক ওই সড়কের ম্যানহোল গুলোতে কাজ করছেন। সেখানে ছিলেন তিতাসের জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ধানমন্ডি টিমের টেকনিশিয়ান রবিউল আলম। তিনি জানান, এখানে এমন বিস্ফোরণের কারণ, গ্যাস লাইন ফুটো হওয়া এবং জমে থাকা ময়লা থেকে গ্যাস সৃষ্টি হওয়া। এই রাস্তার ঢালাই ত্রুটিপূর্ণ। এখানে ঢালাইয়ের পিটে কোনো ফাঁকা রাখা হয়নি। যার জন্য গ্যাস জমা হয়ে এই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে তিনি জানান।

রবিউল আলম বলেন, ‘যেখানে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাবে সেখানে আমরা অনুমানের ওপর চেক করে দেখি। এলাকাবাসী এর আগেও চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু, আমাদের পক্ষে পুরো রাস্তা কাটা সম্ভব নয়। রাস্তা কাটলেই ওয়াসা ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আমাদের ধরবে।’