ইলি-বিলিদের হোটেল ‘ফারিঘর’

সম্প্রতি মিরপুরে চালু হয়েছে আবাসিক হোটেল ‘ফারিঘর’। মালিকেরা বাড়ির বাইরে গেলে পোষা কুকুর, বিড়াল এখানে রাখতে পারবেন।

নানা প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে গেলে পোষা প্রাণী নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন পশুপ্রেমীরা। এসব ভেবে রাজধানীতে পোষা প্রাণীর জন্য খোলা হয়েছে আবাসিক হোটেল। ‘ফারিঘর’ নামের আবাসিক হোটেলে পোষা প্রাণীকে রেখে যেতে পারেন অনেকেই। গত শুক্রবার মিরপুরেশুভ্র কান্তি দাশ

ভারতের নাগরিক জয়িতা ভট্টাচার্য কাজের সূত্রে স্বামীর সঙ্গে ঢাকার সাভারে থাকেন। তিন মাস ধরে কুকি নামের একটি কুকুর পালছেন। তবে কুকুরটি রেখে স্বামী-স্ত্রী দুজন কেনাকাটা বা কোনো কাজেই দীর্ঘ সময়ের জন্য বাইরে বের হতে পারছিলেন না। তাই কুকিকে হোটেলে রাখতে হয় তাঁদের।

কুকুর, বিড়াল বা পোষা প্রাণীর জন্য রাজধানীর মিরপুরে গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হয়েছে আবাসিক হোটেল ‘ফারিঘর’। হোটেলে কুকুর, বিড়াল রাখা হয় আলাদা কেবিনে। অসুস্থ হলে হোটেলের নিচেই ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। ফেসবুকে ফারিঘর পেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বা অনেকে মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে (প্লট–৮০, ব্লক–এ) সরাসরি কুকুর-বিড়াল এ হোটেলে রাখতে আসেন।

গত শুক্রবার দুপুরের দিকে হোটেলটিতে গিয়ে দেখা যায়, সোফি, লুনা, অডিন, লিলি, ডেইজি, জিমি, ইলি, বিলি, হিটলারসহ মোট ৯টি বিড়াল এবং ১৩ বছর বয়সী কুকুর খিচমি আছে সেখানে। প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই জয়িতা ভট্টাচার্য ও তাঁর স্বামীর হাত ধরে তাদের পোষা কুকুর কুকি আসে হোটেলটিতে। কুকি ঘুরে ঘুরে কেবিনসহ বিভিন্ন জায়গা দেখছিল।

হোটেলটিতে কুকুরের জন্য তিনটি আর বিড়ালের জন্য ১৪টি কেবিন আছে। কেবিনের ভেতরই পাথর বিছিয়ে তৈরি করা হয়েছে টয়লেটের ব্যবস্থা। মন চাইলে কুকুর জানালার কাছে বসে আকাশ দেখতে পারবে, সে ব্যবস্থাও আছে।

হোটেলের তিন উদ্যোক্তা হলেন প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও স্থপতি রাকিবুল হক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নুজহাত নাবিলা এবং ডিজিটাল মার্কেটিং খাতে কর্মরত খালিদ ফারহান। উদ্যোক্তারা জানান, হোটেলটিতে বিড়ালের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের ভাড়া ৫০০ টাকা। আর কুকুরের ক্ষেত্রে দেড় হাজার। কুকুর–বিড়ালের মালিক খাবার সঙ্গে করে দিয়ে দেবেন।

প্রাণীদের আবাসিক হোটেলে রাখা এক বিলেতি কুকুর। গত শুক্রবার রাজধানীর মিরপুরে
ছবি: প্রথম আলো

হোটেলের নিচেই আছে পিপল ফর অ্যানিমেল কেয়ার ফাউন্ডেশনের (প ফাউন্ডেশন) প লাইফ কেয়ার ক্লিনিক। এর পাশে আছে আরেকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সাগর মার্ট। যেখানে কুকুর–বিড়ালের খাবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জরুরি পণ্য বিক্রি হয়।

হোটেলটি পাঁচ তারকা মানের কি না, জানতে চাইলে উদ্যোক্তারা হেসে বলেন, এ ধরনের হোটেলের জন্য কোনো মানদণ্ড নেই। ফারিঘরই হয়তো ভবিষ্যতে মানদণ্ড তৈরি করে দেবে। আর এ ধরনের হোটেল চালু করার জন্য কে অনুমোদন দেবে, সে জটিলতাও আছে। আপাতত উদ্যোক্তারা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

উদ্যোক্তাদের একজন নুজহাত নাবিলা বলেন, তাঁর নিজেরও পোষা বিড়াল আছে। পরিবারের সবাই কোথাও বেড়াতে গেলে কাউকে না কাউকে বাসায় থাকতে হয় শুধু এগুলোকে দেখার জন্য। তাই তিনি নিজেও অনেক দিন থেকে এ ধরনের একটি হোটেলের অভাববোধ করছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি পোষা প্রাণীর জন্য এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন।

নুজহাত নাবিলা বলেন, এ হোটেলের আয়ের একটি অংশ ব্যয় করা হবে প ফাউন্ডেশন পরিচালনায়। এতে রাস্তাঘাটের কুকুর, বিড়ালগুলোকে উদ্ধার করে আশ্রয় দেওয়ার কাজটিও সহজ হবে।

হোটেলে রাখার বিভিন্ন শর্তের মধ্যে একটি শর্ত হচ্ছে কুকুর, বিড়ালের টিকা দেওয়া থাকতে হবে। এ শর্ত মানুষকে টিকার বিষয়টিতেও সচেতন করছে। মালিকের ভোটার পরিচয়পত্রের ফটোকপি রাখা, জরুরি যোগাযোগের নম্বর রাখাসহ বিভিন্ন সতর্কতা মানা হচ্ছে।