ঈদের ঢাকায় দিনভর নির্মল বায়ু
ঈদের ছুটির দিনে ফাঁকা ঢাকায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দিনভর নির্মল বায়ু পেয়েছে নগরবাসী। বিশ্বের বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণে এই চিত্র এসেছে।
এয়ার ভিজ্যুয়াল ২০১৬ সাল থেকে ঢাকাসহ বিশ্বের ৯৬টি শহরের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে আসছে। বাতাসে ক্ষতিকর বস্তুকণা পিএম-১০ ও পিএম-২.৫-এর মাত্রা অনুযায়ী ওই মান পরিমাপ করা হয়। মূলত কোনো শহরে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির কালো ধোঁয়া, নির্মাণকাজের ধুলা ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া মিলে বায়ুর মান খারাপ হয়।
এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্য অনুযায়ী, আজ বুধবার সকালে ঢাকার বাতাসে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায়। আর বিকেলে তা বেড়ে ১১ মাইক্রোগ্রাম হয়।
সকালে ঢাকার বায়ুর মানসূচক ছিল ২১। বিকেলে তা কিছুটা বেড়ে ৪৫ হয়। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে এই সূচক ২০০-এর বেশি থাকে। কখনো কখনো তা ৩০০-এর কাছাকাছি চলে যায়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান সূচক অনুসারে, শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত ‘ভালো’। ৫১ থেকে ১০০ ‘মোটামুটি’, ১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত ‘সতর্কতামূলক’, ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ পর্যন্ত ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’, ৩০১ থেকে ওপরে ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’ বা ‘দুর্যোগপূর্ণ’।
বায়ু নিয়ে কাজ করা গবেষকেরা বলছেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৮০ লাখ থেকে এক কোটি মানুষ রাজধানী ছেড়েছে। বায়ুদূষণের সব উৎস এখন বন্ধ। এ ছাড়া সকালে রাজধানীতে বৃষ্টিও হয়েছে। এটিও বায়ুর মান ভালো থাকার অন্যতম একটি কারণ।
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বায়ু নিয়ে কাজ করছেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি আজ ঢাকার বায়ু মান ভালো থাকার তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
কামরুজ্জমান মজুমদার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম কারণ হচ্ছে, সকালে ঢাকা ও আশপাশে বৃষ্টি হওয়ায় বায়ুর মান ভালো হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হলো, বায়ুপ্রবাহের গতি প্রতি ঘণ্টায় ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার, যা কখনো কখনো ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠছে। বায়ুপ্রবাহ বেশি হলে বায়ুর মান ভালো হয়। প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য ১০ মাইক্রোগ্রাম বায়ুদূষণ হয়। যে সংখ্যক মানুষ রাজধানী ছেড়েছে, তাদের কারণে বায়ু দূষণও কমেছে। এটি বায়ুর মান ভালো হওয়ার তৃতীয় কারণ। তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া ঈদের ছুটির কারণে শিল্পকারখানা, নির্মাণকাজ ও ইটভাটা বন্ধ আছে। বায়ুদূষণের জন্য দায়ী এই উৎসগুলো বন্ধ থাকায় ফাঁকা ঢাকায় নির্মল বায়ু উপভোগ করছেন ঢাকাবাসী।