‘উদ্বোধন হলেও হাসপাতাল রোগী নিচ্ছে না, এ কেমন কথা’
উদ্বোধনের এক দিন পার হলেও রোগী ভর্তি শুরু হয়নি কোভিড ফিল্ড হাসপাতালে। এই হাসপাতালে এসে রোগীরা ভিড় করছেন। ভর্তির জন্য অপেক্ষা করছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অক্সিজেন সিলিন্ডার সমস্যা বিকেলের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর রোগী ভর্তি নেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে তারা।
৮০ বছর বয়সী মা শামসুন নাহারকে কোভিড ফিল্ড হাসপাতালে ভর্তি করাতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অপেক্ষা করছেন সৈয়দ প্রিন্স। মায়ের জরুরি আইসিইউ সাপোর্ট দরকার। তাঁদের বাড়ি মাদারীপুরে। তিনি বলেন, ‘আমরা রেফারেন্স নিয়ে আসছি, তা–ও ভর্তি করাতে পারছি না। অক্সিজেন লাইনে কাজ চলছে। উদ্বোধন করেছে হাসপাতাল, অথচ রোগী নিচ্ছে না। এ কেমন কথা।'
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার সমস্যা আজ বিকেলের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। তখন রোগী ভর্তি হওয়া শুরু হবে। যাদের অক্সিজেন সংকট বেশি, সেই রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর মিন্টো রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন সেন্টারে গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে কোভিড ফিল্ড হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এই হাসপাতাল উদ্বোধন করেন। তিনি জানান, তখন থেকেই হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু হবে। অথচ উদ্বোধনের এক দিন পার হলেও অক্সিজেন লাইন প্রস্তুত না হওয়া, জনবল কম থাকার কারণে এই হাসপাতালে আজ দুপুর পর্যন্ত রোগী ভর্তি শুরু হয়নি।
চাঁদপুর উত্তর মতলব থেকে এসেছেন ৬৯ বয়সী মো. জুলফিকার হোসেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত। মাস্ক পরে তিনি কোভিড ফিল্ড হাসপাতালের সামনে বসে আছেন। অপেক্ষা করতে তাঁর কষ্ট হচ্ছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার খুব খারাপ লাগছে। ভর্তি করা হবে বলে হাসপাতাল থেকে জানাল। কিন্তু বিছানায় নিচ্ছে না। বিছানা এখনো তৈরি হয়নি। তিন ঘণ্টা ধরে বসে আছি। আর কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করব?’
রোগীর প্রচুর চাপ আছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন সেন্টারের অস্থায়ীভাবে স্থাপিত কোভিড ফিল্ড হাসপাতালের সমন্বয়কারী দেবব্রত বণিক। তিনি জানান, উদ্বোধনের পর গতকাল দুপুর থেকে আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৪০ জন রোগী সেবা নিয়েছেন। কোভিড ফিল্ড হাসপাতালের অক্সিজেন সঞ্চালন লাইনে কাজ হচ্ছে। দুপুর নাগাদ এ কাজ শেষ হতে পারে। হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু হবে।
ভর্তি শুরু না হওয়ায় এই হাসপাতালে এসে রোগীরা অপেক্ষা করছেন। হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে বসে রোগী ও স্বজনেরা অপেক্ষা করছেন।
তেমনই একজন ৬৬ বছর বয়সী শাফাকাত চৌধুরী। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত এই ব্যক্তির তীব্র শ্বাসকষ্ট আছে। তিনি এসেছেন ফেনী সদর থেকে। তিনি অপেক্ষা করছেন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে। শাফাকাত বলেন, ‘সকাল থেকে এসে অপেক্ষা করছি। হাসপাতাল থেকে বলছে, অক্সিজেন আছে। তবে সঞ্চালন লাইন নেই। এ কারণে রোগী ভর্তি নিচ্ছে না। আমার তো অনেক কষ্ট হচ্ছে।’
আজ সোমবার কোভিড ফিল্ড হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অভ্যর্থনা ও তথ্যকেন্দ্রে বিভিন্ন রোগীর স্বজনেরা এসে হাসপাতালের শয্যা ফাঁকা আছে কি না, তার খোঁজ করছেন। ভেতরে চিকিৎসকেরা নার্সদের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন, এদিক–সেদিক ঘোরাঘুরি করছেন। হাসপাতালের ভেতরে অক্সিজেন লাইন টানার জন্য শ্রমিকেরা কাজ করছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অন্তত ২৫০ জন রোগী যাঁরা অন্য হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাঁরা এই হাসপাতালে ভর্তির জন্য সিরিয়াল দিয়ে আছেন। কিন্তু অন্য কোনো হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের ভর্তি নেওয়া হবে না। কেবল নতুন রোগী বা মুমূর্ষু রোগী ভর্তি নেওয়া হবে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। হাসপাতালে জনবলের অভাব আছে। যেসব রোগী আসছেন, তাঁরা মৃদু উপসর্গ ও উপসর্গ নিয়ে আসছেন। তাই তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বিকেল নাগাদ কাজ শেষ হতে পারে।
অভ্যর্থনা ও তথ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা অনিক নামের এক ব্যক্তি জানালেন, এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। এমনকি কোনো রোগী এখানে দেখা হচ্ছে না। তিনি বলেন, কিছু টেকনিক্যাল কাজ গোছানো বাকি আছে।