করোনায় কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই

এলোমেলো চেয়ার-টেবিল। ধুলো জমে আছে ফ্রিজসহ যাবতীয় আসবাবে। অনেক দিন যে কোনো ক্রেতার পা পড়েনি, তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে জমে থাকা ধুলোর স্তর। এ দৃশ্য ধানমন্ডির ‘কফি বিনএন্ডটি লিফে’র। করোনাকালের আগেও মানুষের পদচারণে মুখর থাকত এই কফি হাউস।
করোনাভাইরাস নামের এই মহামারি ধ্বংস করে দিয়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। জীবিকা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে মানুষ। শঙ্কা থেকে বাদ নেই শহরের কফি হাউসগুলো। গুলশান-বনানী ছাড়া রাজধানীর প্রায় সব কফিশপ এখন বন্ধ। কোথাও ক্রেতাও নেই। তিন মাস ধরে এই অবস্থা চলছে।
কফিশপ কফি বিনএন্ডটি লিফের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম বললেন, করোনার আগে তাঁদের দুটি কফিশপে মাসে ৩০ লাখ টাকার মতো বেচাকেনা হতো। এখন তা ৩ লাখ টাকায় ঠেকেছে। তারপরও যা বেচাকেনা হচ্ছে, সবই অনলাইনে। সরকারি অনুমতি না থাকায় ক্রেতারা এসে বসে খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন না। তাঁদের ৪০ জন কর্মচারীর মধ্যে ১০ জন কাজ করছেন, বাকিরা গ্রামে চলে গেছেন।
একই ধরনের মন্তব্য করলেন পশ্চিম পান্থপথের একটি কফিশপের মালিক মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, জীবনে এত খারাপ সময় কখনো পার করিনি। যা বেচাকেনা, তা দিয়ে দোকান ভাড়াও হয় না।
>গুলশান-বনানী ছাড়া রাজধানীর প্রায় সব কফিশপ এখন বন্ধ। কোথাও ক্রেতাও নেই। তিন মাস ধরে এই অবস্থা চলছে।
ফাস্ট ফুডের পাশাপাশি কফি বিক্রি হতো ধানমন্ডির ক্যাফে বার্গারে। করোনার কারণে সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর থেকে দোকানটি খোলা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে দেখা গেল, দোকানের ভেতর দুজন কর্মচারী বসে গল্প করছেন, কোনো ক্রেতা নেই। দোকানের কর্মচারী রাজিব হোসেন বলেন, অনলাইনে কিছু কফি বিক্রি হচ্ছে, এ ছাড়া কোনো কেনাকাটা নেই। তাঁদের দোকানভাড়া ৭০ হাজার টাকা আর কর্মচারী ১০ জন। যা কেনাবেচা হচ্ছে, তাতে কিছুই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।
সাত বছর ধরে গেন্ডারিয়ায় কফির দোকান দিয়েছেন সোহাগ খান। করোনার আগে প্রতিদিন তাঁর দোকানে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা কেনাবেচা হতো। করোনার এই সময়ে তা দাঁড়িয়েছে এক থেকে দুই হাজারে। অথচ তাঁকে দোকান ভাড়া দিতে হয় ১০ হাজার টাকা করে। সোহাগ খান বললেন, এভাবে চললে দোকান বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
রাজধানীর বেইলি রোড, এলিফ্যান্ট রোড, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, অধিকাংশ কফির দোকান বন্ধ রয়েছে। রেস্তোরাঁও বন্ধ। তবে গুলশান-বনানী এলাকায় কিছু রেস্তোরাঁ খোলা দেখা গেছে।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন বলেন, ঢাকা শহরে ৮০০ হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে কপিশপ ৫০০টি। করোনার কারণে সবই প্রায় বন্ধ। দিনের পর দিন এভাবে সবকিছু বন্ধ থাকায় রেস্তোরাঁ, কফিশপের ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাঁরা কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছেন না। অনেক কর্মচারী গ্রামে চলে গেছেন। অল্প কিছু কর্মচারী দিয়ে দোকান খুললেও সেখানে ক্রেতা নেই। অনলাইনে বেচাকেনা যা হয়, তার বড় অংশ চলে যায় পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পেছনে। তিনি বলেন, এই অবস্থায় সরকারের আর্থিক সহযোগিতা না পেলে এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।