কর্মস্থলে কাজের চাপ নিয়ে হতাশ ছিলেন সুব্রত সাহা, দাবি পরিবারের

সুব্রত সাহা
ছবি: সংগৃহীত

কর্মস্থল নিয়ে হতাশ ছিলেন প্রকৌশলী সুব্রত সাহা (৫৩)। সে কথা পরিবারের কাছে বলেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপক (প্রকৌশলী) হলেও কাজ করতে হতো অন্য বিভাগেও। সুব্রত সাহার সহকর্মীরা ও পুলিশ প্রাথমিকভাবে তাঁর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলছেন। তবে এটিকে রহস্যজনক বলে দাবি করেছে পরিবার।

পরিবারের দাবি, সুব্রত সাহাকে কর্মস্থল থেকে কাজের অতিরিক্ত চাপ দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রকৌশলী হিসেবে প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করে এলেও এক বছর ধরে তাঁকে ওই কাজের পাশাপাশি কোম্পানির হিসাব বিভাগেও কাজ করতে হচ্ছিল। এ নিয়ে তাঁর মধ্যে হতাশা ছিল। পরিবারের কাছে সেই হতাশার কথা একাধিকবার বলেছেন তিনি।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের দ্বিতীয় তলার বর্ধিতাংশের ছাদ থেকে সুব্রত সাহার (৫৩) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

মর্গের সামনে কথা হয় সুব্রত সাহার শ্যালক বিশ্বজিৎ সাহার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কর্মস্থল নিয়ে তাঁর (সুব্রত সাহা) মধ্যে হতাশা ছিল। তাঁকে নিয়মিত কাজের বাইরেও অন্যান্য কাজ করতে হতো।

সুব্রত সাহার মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছেন তাঁর ভাতিজির স্বামী সুমন রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এই মৃত্যু স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।’ পুলিশকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার দাবি জানান তিনি।

এদিকে সুব্রতর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, এক বছর ধরে তাঁকে অতিরিক্ত কাজ করতে হতো।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেডের প্রধান ব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও প্রকৌশলী) আশরাফুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, অফিস অর্ডার বা নির্দেশে তাঁকে হিসাব বিভাগের কিছু কাজ দেওয়া হয়েছিল। কোম্পানির তালিকা ধরে কারা ভাড়া দিচ্ছেন, কারা দিচ্ছেন না, সেই তালিকা করতে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ওই কাজ নিয়ে তাঁর মধ্যে একধরনের হতাশা ছিল।

আশরাফুর রহিম বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে কখনো কাজের জন্য চাপ দিইনি; বরং সব সময় সহযোগিতা করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু কর্মস্থল নিয়েই নয়, শেয়ারবাজারে তাঁর কিছু বিনিয়োগ ছিল। সেখানেও তাঁর লোকসান ছিল। তিনি নিয়মিত মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেন।’

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, সুব্রত সাহা সকালে কর্মস্থলে এসে সরাসরি ছাদে চলে যান। সকাল সোয়া ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে হোটেল ভবনের ছাদ থেকে পড়ে যান তিনি। এটি হত্যা, আত্মহত্যা, নাকি দুর্ঘটনা, তা তদন্ত শেষে জানা যাবে।

বিকেল পৌনে ছয়টা পর্যন্ত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ শনাক্তকরণ দল ঘটনাস্থল থেকে হাত-পায়ের আঙুলের ছাপ ও আলামত সংগ্রহ করে। সুব্রত সাহা স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে থাকতেন। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরে। তিনি চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে পড়াশোনা শেষ করেন।

আরও পড়ুন